র্যাবের প্রশংসা করলেও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বার্তা দেননি মার্কিন মন্ত্রী
র্যাবের বর্তমান কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে কবে নাগাদ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো বার্তা দেয়নি দেশটি।
আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকা সফররত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছে, র্যাবের কর্মকাণ্ডে তারা খুব খুশি। কবে নাগাদ নিষেধাজ্ঞা তোলা হতে পারে এটা নিয়ে তারা কিছু বলেনি। এটা একটা প্রক্রিয়া।
জবাবে লু বলেন, র্যাব নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্বীকৃতি দিয়েছে, আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। খুব চমৎকার কাজ হয়েছে। তারা ল’এনফোর্সমেন্ট এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। সন্ত্রাস প্রতিরোধে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের আশা, আমরা স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব। তারা বলেছেন, অনেক সময় অনেকে অভিযোগ করেন। আমরা বলেছি, অভিযোগ তো তোমার দেশেরও করে। তোমার ৭৭ পারসেন্ট রিপাবলিকান বলছে, তোমাদের ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। আমাদের দেশেও এরকম কিছু লোক আছে এগুলো বলে। এগুলো তো কিছু লোক বলবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমার সঙ্গে ওনার (লু’র) দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনা খুব কনস্ট্রাকটিভ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পুরোনো বন্ধু। গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আর আমরা আগামী ৫০ বছরে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাই। এটা নিয়ে আমরা আলাপ করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পরামর্শ দেয়নি। আমরা বলেছি, কোনো দেশই জুতসই নয়। তোমাদের দেশও (যুক্তরাষ্ট্র) জুতসই নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি।
ডোনাল্ড লু বলেন, জিএসপি সুবিধার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কিছু দেশ অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি। জিএসপি সুবিধা চালু হলে প্রথমে বাংলাদেশ এই সুবিধা পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কি না— জানতে চাইলে লু বলেন, আমরা আমেরিকান। সবসময় ভালো পরামর্শ দেই। আমরা শ্রম অধিকার নিয়ে আলাপ করেছি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের মধ্যে এ বছর এ বিষয়ে ভালো অগ্রগতি আসবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে লু বলেন, ভালো আলোচনা হয়েছে। এটা একটা কৌশল। এটা ক্লাব না। বাংলাদেশ যুক্ত হলে অধিক রিসোর্সের সুবিধা পাবে।
জ্বালানি ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তাদের সহযোগিতা চাই। কোস্টাল বেল্ট আরও ব্রডেন করতে চাই। এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি বলেন, কীভাবে আমাদের এ সম্পর্ককে আরও অর্থবহ করা যায়, আরও ভালো করতে পারি; সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। মোটামুটি আমরা ঐক্যমতে আছি। আমরা ভবিষ্যতে ভালো দিনের অপেক্ষায় রয়েছি।
ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের একটা কমিটমেন্ট আছে, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। আমরা যখন সমস্যা দেখি, তখন কথা বলি, পরামর্শ দেই। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলি। আমরা আমাদের গুরত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে চাই।
মোমেন বলেন, আমাদের যে যোগাযোগ এটা খুব কাজের। এর ফলে আমাদের মধ্যে যদি কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। আর আমরা ভালো পরামর্শ পেলে অবশ্যই গ্রহণ করব। তার নমুনাও দেখিয়েছি। আমাদের কোথাও যদি দুর্বলতা থাকে আমরা ওটা নিয়ে কাজ করব।
তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারে এসেছে। ব্যালটের মাধ্যমে সরকার এসেছে। কখনও বুলেটের মাধ্যমে আসেনি। আমরা অনেকগুলো বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছি।
আগামী ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সফর করার জন্য লু’র পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।