মিথ্যাবাদী চেনার সহজ উপায়!
প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষই ১০ মিনিটের আলাপের পরই মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়াতে শুরু করে। গড়ে দিনে ২-৩টার বেশি মিথ্যা বলি না আমরা। বেশিরভাগ মানুষ মিথ্যা শোনার দলে পড়েন। দিনে ১০ থেকে ২০০টি মিথ্যা শুনতে হয় আমাদের। এ তথ্যগুলো জানিয়েছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। তবে এসব ধারণা ও গবেষণা থেকে আপনি কোনটা বিশ্বাস করবেন?
তবে কে কয়টা মিথ্যা বলছে, তা না জেনে কে কখন মিথ্যা বলছে, তা জানাতে সাহায্য করতে পারে বিজ্ঞান। এসব প্রশ্নের বিভিন্নরকম উত্তর জানাচ্ছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।
জার্নাল অভ বেসিক অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সোশাল সাইকোলজিতে সস্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ মানুষই ১০ মিনিটের আলাপের পরই মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়াতে শুরু করে।
অন্যদিকে বার্মিংহামের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতারণা বিশেষজ্ঞ টিমোথি লেভিন বলছেন, মানুষের মিথ্যা বলার হার আরও অনেক কম। তার মতে, গড়ে দিনে ২-৩টার বেশি মিথ্যা বলি না আমরা। কিন্তু মিথ্যাবিষয়ক একটি বইয়ের লেখক পামেলা মেয়ার পুরো ঘটনাটিকে দেখছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি মনে করেন, বেশিরভাগ মানুষ মিথ্যা শোনার দলে পড়েন। দিনে ১০ থেকে ২০০টি মিথ্যা শুনতে হয় আমাদের।
এসব ধারণা ও গবেষণা থেকে আপনি কোনটা বিশ্বাস করবেন? তবে কে কয়টা মিথ্যা বলছে, তা না জেনে কে কখন মিথ্যা বলছে সেটি জানাই তো বেশি ভালো, নয় কি? সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বিজ্ঞান।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের ফলিত সামাজিক মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালডার্ট ভ্রিজ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সাইকোলজি অ্যান্ড বিহেভিয়ার অ্যানালাইসিস-এ প্রকাশিত তার এক গবেষণায় মিথ্যাবাদীদের হাটে হাঁড়ি ভাঙার কিছু উপায়ের বলে দিয়েছেন।
তার গবেষণার মূল পরামর্শ হলো, সম্ভাব্য মিথ্যাবাদীর অবধারণগত চাপ বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে তাদের পক্ষে কোনো মিথ্যার বিস্তারিত তথ্যের মধ্যে ছন্দ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও স্পষ্ট করে বললে, ভ্রিজ ও তার সহকর্মীরা গবেষণায় দাবি করেছেন, মিথ্যাবাদীদের মনোযোগের একটি অংশ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বা কাজের ওপর আটকে রেখে এরপর তারা যে বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা বলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা নিয়ে যুগপৎভাবে প্রশ্ন করে গেলে তাতে তাদের মিথ্যা ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ গবেষণায় ১৬৪ জন মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেন। এরপর তাদেরকে প্রথমে দুই ভাগে, এবং পরে আরও তিনটি উপভাগে ভাগ করে 'খবরে প্রকাশিত বিভিন্ন সামাজিক বিষয়' নিয়ে কথা বলতে বলা হয়। এদের সবার কাছ থেকে পরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্রথম দুই ভাগের একটিকে সাক্ষাৎকারের সময় সত্য এবং অপরটিকে যথাসম্ভব বিশ্বাসযোগ্য করে মিথ্যা বলার নির্দেশনা দেন গবেষকেরা। এরপর তিনটি উপদলের প্রথমটিকে বলা হয় একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর মনে রাখার জন্য। এটি তাদেরকে গৌণ মানসিক কাজ হিসেবে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় উপদলটিকেও একই তথ্য মনে রাখতে বলা হয়, তবে তাদেরকে আরও বলা হয় এই তথ্যটি মনে রাখা ভীষণ জরুরি এবং এটি তারা পরে ঠিকমতো বলতে না পারলে তার জন্য পেনাল্টি পেতে হবে। অবশিষ্ট তৃতীয় উপদলটিকে এ ধরনের বাড়তি কোনো তথ্য মনে রাখার কথা বলেননি গবেষকেরা।
ফলাফলে দেখা গেল প্রাথমিক দলের যাদেরকে মিথ্যা বলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং যারা দ্বিতীয় উপদলে ছিলেন, তারা সাক্ষাৎকারের সময় প্রথম ও তৃতীয় উপদলের চেয়ে কম সফলভাবে সাক্ষাৎগ্রহীতাদের কাছে নিজেদের মিথ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেরেছিলেন।
ভ্রিজ বলেন, আমাদের গবেষণা এটাই দেখিয়েছে যে ঠিকমতো চিন্তা করে বলার সুযোগ থাকলে সত্য আর মিথ্যা দুটোই সমানভাবে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতে পারে। আর ব্যক্তি চিন্তা করার সুযোগ কম পেলে তখন মিথ্যার চেয়ে সত্য বেশি সম্ভাবনীয় বলে মনে হয়।
পামেলা মেয়ার মিথ্যা নিয়ে এক টেড টকে মিথ্যাবাদী চেনার কিছু উপায়ের কথা বলেছিলেন। যেমন মিথ্যা বলার সময় মানুষ অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি ফর্মাল ভাষা ব্যবহার করে কথা বলে; 'সত্যি বলতে কী…' এ ধরনের বাক্যাংশ দিয়ে কথা শুরু করে; কিংবা সন্দেহজনক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেন। তবে ভ্রিজের গবেষণায় মিথ্যাবাদী চেনার উপায়টি আরও বেশি কৌশলগত। এখানে মিথ্যাবাদীর সুনির্দিষ্ট আচরণগত ছন্দের ওপর নজর না রেখে বরং তাদের মিথ্যা বলা কঠিন করে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু সবক্ষেত্রে হয়তো এ ধরনের কৌশল কাজে না-ও লাগানো যেতে পারে। যেমন চাকরির সাক্ষাৎকারে প্রার্থীকে হুট করে বাইরে পার্ক করা কোনো গাড়ির নম্বর প্লেট মনে রাখতে বলাটা অশোভনীয় ও অদ্ভুত। সেক্ষেত্রে চাইলে প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো কাজ বা সিমুলেটরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কের চমৎকারিত্বের কোনো শেষ নেই। আর এর কাজের ধাঁচও অপ্রত্যাশিত। তাই যদি মস্তিষ্কের অবধারণগত চাপ বাড়িয়ে মিথ্যাকে কম কার্যকরী করে তোলা যায়, তাহলে এ কৌশলটি কাজে লাগানোর চেষ্টায় ক্ষতি কী!