আর্কাইভ থেকে ইউরোপ

শীতে বাঁধাকপির মতো পোশাক পরে ইয়াকুটস্কের মানুষ

দেশের তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রী হলেই শীতে কাঁপতে থাকে জনজীবন। সেই জায়গায় কোনো শহরের তাপমাত্রা যদি শুন্য ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও অনেক নিচে নেমে যায়, তাহলে সেই শহরের বাসিন্দাদের কতটা দুর্বিষহ অবস্থা হতে পারে তা অনুমান করা আসলেও কঠিন।

রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সাখা রিপাবলিকের রাজধানী ইয়াকুটস্ক তেমনই একটি শহর। সম্প্রতি এ শহরের তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। খবর: রয়টার্স

ইয়াকুটস্কের তাপমাত্রা যে হঠাৎ করেই অনেক নিচে নেমে গেছে এমনটা নয়। বরং অধিকাংশ সময়ই শহরটির তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। এত কম তাপমাত্রার জন্য এটিকে পৃথিবীর শীতলতম শহরও বলা হয়ে থাকে।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ইয়াকুটস্ক শহরের তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে বেশি নেমে গিয়েছিল হিমাঙ্কের ৬৪ ডিগ্রি নীচে। এবারও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় শহরের বাসিন্দারা।

হাঁড় কাপানো ঠান্ডার জন্য ইয়াকুটস্কের বাসিন্দাদের কষ্টের শেষ নেই। টুপি, গ্লাভস, হুডি ইত্যাদির সমন্বয়ে কয়েক স্তরের পোশাক পরতে হয় তাদের। শহরের একজন বাসিন্দা অ্যানাসতাসিয়া গ্রুজদেবা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই তীব্র শীতের সাথে আপনি যুদ্ধ করতে পারবেন না। আপনাকে হয় ঠিকঠাক মতো ভারি পোশাক পরতে হবে; অন্যথায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বসবাস করা অন্য অনেক অঞ্চলের মানুষদের জন্য প্রায় অসম্ভব হলেও, ইয়াকুটস্কের বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেই এ তাপমাত্রায় সাথে মানিয়ে নিয়েছেন। অ্যানাসতাসিয়া আরও বলেন, ‘আপনি এই শহরে থাকলে ঠাণ্ডাকে আলাদাভাবে অনুভব করতে পারবেন না। হয়ত মস্তিষ্ক আমাদের এভাবেই প্রস্তুত করে এবং মনে করায় যে সবকিছু স্বাভাবিক আছে।’

তীব্র শীতেও ইয়াকুটস্ক শহরে থেমে নেই জীবন। শহরের আরেক বাসিন্দা, মাছ বিক্রেতা নুরগুসুন স্টারোসটিনা নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন এ পরিস্থিতির সাথে। নুরগুসুন বলেন, ‘তীব্র শীতে নিজেকে কয়েক স্তরের শীতের পোশাকে জড়িয়ে রাখলেই হয়। অনেকটা বাঁধাকপির মতো!’

সোভিয়েত সময়ে ইয়াকুটস্ক নির্বাসিত স্থান হিসাবে পরিচিত ছিল। তৎকালীন সময়ে কেউ যদি জোসেফ স্টালিনের মতামতের বিরোধিতা করতো, তখন তাকে এই শহরে পাঠানো হত। তবে বর্তমানে এখানকার জীবন তুলনামূলক স্বাভাবিক হয়েছে।

২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, 'বরফের নরক' হিসেবে খ্যাত শহরটিতে  শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার। বাসিন্দাদের অধিকাংশই খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলির মধ্যে অন্যতম ইয়াকুটস্ক। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন