উপনির্বাচন থেকে সরলেন দুইবারের এমপি জিয়াউল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর এবার সরে দাঁড়ালেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। জাতীয় পার্টি থেকে পর পর দুবার এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।
বুধবা(১৮ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আপেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।
জিয়াউল হক মৃধা গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাক্তিগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিবেন জিয়াউল হক।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি হতে যাওয়া উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এ নির্বাচনে লড়তে যাওয়া উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার জয়ের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে গেলো।
গেলো শনিবার (১৪ জানুয়ারি) এক সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের তিন সমর্থক মঈন উদ্দিন মঈন, মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু ও শাহজাহান আলম সাজু।
আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ছাড়া এখন পর্যন্ত যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে আছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুল হামিদ ভাসানী, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
জিয়াউল হক মৃধা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তার উপলব্ধি হয়েছে, আসন্ন উপনির্বাচনে পরবর্তী সংসদীয় মেয়াদকাল জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য খুব সংক্ষিপ্ত সময়। ভোটারদের যে ওয়াদা ও আশ্বাস দিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন, সংক্ষিপ্ত সময়ে সে ওয়াদা ও আশ্বাস বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। তাই ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচন থেকে তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন।
বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পদত্যাগ করেও এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ ছাড়েননি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বতন্ত্রসহ তিনি ওই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।
ছয়বার নির্বাচন করে তিনি মাত্র একবার পরাজিত হন। তার নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিস্মিত, কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। তারা এই পদক্ষেপকে দেখছেন দলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আবারও নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়েছে দুই উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভোটাররা বলছেন, লড়াইটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হবে।
এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, জেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা।
তবে চার প্রার্থীর পদত্যাগের কারণে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ের পথটা যেন পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাছাড়া আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে গিয়েছেন-এমন আলোচনাও রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, এখানে যেহেতু দল কোনো প্রার্থী দেয়নি সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। তারা স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। মূলত নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে অনেকটা অসময়ে। দলের প্রার্থীরা সময় নিয়ে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় জাতীয় সংসদে শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ঠিক করে গত ১৮ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির ছাড়া আসনগুলো হলো বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩, ঠাকুরগাঁও-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া ভোটের আমেজ সেভাবে নেই কোথাও।