আর্কাইভ থেকে লাইফস্টাইল

যে কথাগুলো সন্তানকে কখনোই বলা ঠিক নয়

একটি শিশু তার পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে। বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয় হয়। আর তাই অভিভাবকদের কখনোই বাচ্চাদের সামনে কটূক্তি করা ,একে অপরকে দোষারোপ করা বা চিৎকার করা উচিত নয় কারণ সেটা বাচ্চাদের ওপর একটা খারাপ প্রভাব ফেলে। এই বিষয়ে বাবা মায়েদের অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বাচ্চাদেরকে শেখানো হয় বড়দের সম্মান করতে কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই বাচ্চাদের সম্মান বা তাদের সাথে ভালো আচরণ করেন না। এমন কিছু কথা আছে যা সন্তানদের কখনোই বলা উচিত না। কারণ এ বিশেষ কথা, শব্দগুলো একটি বাচ্চার স্বতঃস্ফূর্তভাবে বড় হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চলুন জেনে নেয়া যাক সে সব কথা এবং শব্দগুলো- 'চুপ কর' সন্তান

আপনার সন্তান আপনার কাছে কিছু একটা বলতে এসেছে, তার পুরো কথাটি না শুনেই কথার মাঝে বললেন ‘চুপ কর’। এই অবিনয়ী কথাটির মাধ্যমে আপনি বাচ্চাদের নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে বাধা দিচ্ছেন। তাই এই শব্দ চয়নটি থেকে বিরত থাকুন। কেঁদো না সন্তান

‘কান্না’ মানুষের দুঃখ প্রকাশের একটি মাধ্যম। যখন ভীষণ মন খারাপ হয় তখনই একজন মানুষ কাঁদে। আর তাই বাচ্চাদের কখনো কাঁদতে বারণ করবেন না। পেন্সিল বা চকলেট হারিয়ে যাওয়ার দুঃখ আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আপনার কাছে ১০০ টাকার নোট যেমন ভীষণ মূল্যবান ঠিক তেমনি ছোট শিশুটির কাছে ঐ চকলেট, পেন্সিলও ভীষণ মূল্যবান। ওদের ব্যবহৃত জিনিসের সাথে জুড়ে থাকা আবেগকে মূল্য দিন। কাঁদতে বারণ করা মানে ওদের আবেগ প্রকাশে বাধা দেয়া। অপমানজনক কথাবার্তা/ গালি দেয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন যে কখনওই বাড়িতে অপমানজনক কথা বলবেন না কিংবা গালি দিবেন না। ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সি শিশুরা এই জাতীয় ভাষা দ্রুত শিখে যায়।  তারা শব্দগুলির অর্থ বুঝতে না পারলেও তারা ভাবে যে এই শব্দগুলো গ্রহণযোগ্য , বিশেষ করে বাড়ির লোককে যখন এগুলো বলতে শোনে। তুমি কেন তার মতো হতে পারো না? আপনি হয়তো ভাবেন যে আপনার বাচ্চাকে তার বন্ধুদের সাথে তুলনা করলে সেটা তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। তবে এই ধরণের মন্তব্য বাচ্চাদের নিজেদের প্রতি হীনমন্যতা তৈরি হয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তোমার লজ্জা হওয়া উচিত! সন্তান

আমরা বড়রাই অনেক সময় বুঝি না কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। আর একটা ছোট বাচ্চা কিভাবে বুঝবে! সে সব কাজই করে নিষ্পাপ উদ্দেশ্য নিয়ে। ভুল করে ফেললে তাকে বোঝাতে হবে যে কাজটা ঠিক নয়। কিন্তু সে যখন বুঝতে পারছে না ভুলটা কি করেছে, তখন এসব কথা বলে তাকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। তুমি খুব বোকা বা স্টুপিড সন্তান

এমনটা হতেই পারে আপনার সন্তান কোনো একটা বিষয় বুঝতে অন্যদের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। এক্ষেত্রে রাগ করা যাবেনা, তাকে ধৈর্য ধরে বুঝাতে হবে। তাকে বোকা বললে সেটা তার মনে সুগভীর হীনম্মন্যতার জন্ম দেবে! এতে করে হিতে বিপরিত হতে পারে। ইদানিং তুমি বখাটে হয়ে গেছ সন্তান

বাচ্চা কথা শুনছে না বলে অনেক অভিভাবকই আছেন যারা বলেন, তুমি বখাটে হয়ে গেছ।  অনেক শিশু হয়তো বখাটে শব্দটির অর্থও বুঝে না। কথা না শোনার জন্য আপনি তাকে সামান্য বকুনি তাকে দিতে পারেন। কিন্তু কথায় কথায় সে কতটা স্পয়েলড বা বখাটে ইত্যাদি উল্লেখ করা চলবে না। তাহলে তার মনে ওই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে থাকবে সারা জীবনের জন্য, নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা সে ছেড়ে দেবে। এবং দিন দিন বিপথে চলে যাবার সম্ভাবনা প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। তুমি সবচেয়ে স্মার্ট সন্তান

সন্তানের সামনে ঘন ঘন তার নিন্দা করা যেমন সমস্যা ডেকে আনতে পারে, তেমনই অসুবিধা তৈরি করতে পারে অতিরিক্ত প্রশংসাও। সন্তান কতটা স্মার্ট বা চৌকস, সেটাও তার সামনে উল্লেখ না করাই ভালো। এটি করলে তার মনে নিজেকে নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হবে, সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সের শিকার হবে সে। এবং যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। ‘বাবা ফিরুক তারপর বলছি’ আপনার সন্তান যতই ভুল করুন না কেন, ‘বাবা ফিরুক তারপর বলছি’- এ ধরনের কথা কখনও বলবেন না। এতে ওরা ভয় আরও কিছুটা সময়ের জন্য পুষে রাখে। বাবা সম্পর্কে মনে ভয় ঢোকে। ফলাফল ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় বাবার সঙ্গে। আর এভাবে কখনোই সন্তানকে শৃঙ্খলা শেখানো যায় না। তোমার জন্য আমার সময় নেই সন্তান

আপনি হয়তো খুব ব্যস্ত এবং আপনার সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর জন্য অবকাশ নেই। আপনি অবশ্যই এটি  বিনয়ের সঙ্গে তাদের বলতে পারেন। প্রতিটি শিশুই বাবা মায়ের মনোযোগ চাই। তারা নিজেদের অবাঞ্ছিত বোধ করতে পারে যখন তারা ভাবে যে আপনাদের কাছে তাদের সাথে সময় কাটাবার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তোমার জন্যই আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে! সন্তান

আজকাল আমাদের আশেপাশে সেপারেশন, ডিভোর্স-এর ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। একটি সম্পর্কের বিচ্ছেদ যেমন আপনার মনে প্রভাব ফেলেছে, ঠিক তেমনি আপনার সন্তানের মনেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তাই এ সময় ‘তোমার জন্যই আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে!’- এ ধরনের কথা বলা যাবে না। বাবা মায়ের মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে বাচ্চা নিজে থেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, নিজেকে অবহেলিত এবং বোঝা বলে মনে করতে থাকে। এর মাঝে যদি তাকে এমন একটা কথা বলা হয় তবে প্রচণ্ড কষ্ট পাবে সে। বাবা মায়ের দোষের বোঝা তাকে কখনোই বহন করতে দেবেন না। তুমি না জন্মালেই ভালো হত! সন্তান

নিজের সন্তানকে ভালবাসলে এমন হৃদয়হীনের মতো কথা বলা সম্ভবই না। বাচ্চার মনে কেমন কষ্ট লাগবে সেটা বলে দেবার প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই ভাবুন তো, আপনার বাবা মায়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনলে কি রকমের আঘাত পাবেন আপনি? ভুলেও এ কথাটি বলা যাবে না বাচ্চাকে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন