ডাকাতি মামলায় কারাগারে গিয়ে জঙ্গি হয় রনবীর
কক্সবাজারে কুতুপালংয়ে গ্রেপ্তার হওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ ডাকাতির মামলায় কারাগারে গিয়ে জেএমবি সদস্যদের সংস্পর্শে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন।
আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন রনবীর। কিন্তু পরে ডাকাতি করতেন তিনি। এরপর ডাকাতির মামলায় কারাগারে গেলে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় তার। এরপর জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে জেএমবিতে এবং পরে ২০১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারে যোগ দেন তিনি। এরপর প্রায় এক বছর আগে সংগঠনটির সমারিক শাখার প্রধান হন রনবীর।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সংগঠনকে সহায়তা এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় রনবীরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া তার সহযোগী আবুল বাশার মৃধা প্রসঙ্গে কমান্ডার মঈন বলেন, বাশার হাটহাজারীতে মাদরাসায় পড়াশোনা করে অন্য একটি মাদরাসায় পড়াতেন। তিনি দীর্ঘদিন জঙ্গি সংগঠন হুজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই সময় ঝালকাঠিতে একটি মামলায় প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারে যোগ দেন তিনি।
এদিকে, গ্রেপ্তার জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের কাছ থেকে সংগঠনটির আমিরের অবস্থানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান র্যাবের মুখপাত্র।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রনবীরের কাছ থেকে উদ্ধার করা ভিডিওতে দেখা যায় কীভাবে তারা পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীর সহায়তায় দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মাদরাসায় অনুদানের কথা বলে দেশ ও বিদেশ থেকে টাকা এনে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত হিজরতে নামে পাহাড়ে এনে অন্তত ৫০ জন যুবককে দেশি-বিদেশি অস্ত্র দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নামে জঙ্গি সংগঠনটি। হামলার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়ার পরিকল্পনায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সবশেষ কক্সবাজারে কুতুপালংয়ে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান গ্রেপ্তার হলে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। জব্দ করা হয় ওই ভিডিওটি। সেখানে দেখা যায় পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণের নিতে গিয়ে দুজন মারা যাওয়ার তথ্য পায় র্যাব।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাদের পাহাড়ে আনা হচ্ছে, তাদের এ ভিডিও দেখে প্রশিক্ষণের প্রাথমিক ধারণা দিতেই তা বানানো হয়েছে বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিডিওর শুরুতে সংগঠনটির প্রধান আনিসুর রহমানকে দেখা যায়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
একের পর এক সাড়াশি অভিযানে পাহাড়ে কয়েকজন আত্মগোপনের চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ আবু বাশারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন, ১০ রাউন্ড গুলি, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি কার্টিজ, ১০০ রাউন্ড ২২ বোরের গুলি ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।