যে কারণে ভালো কর্মীরাও চাকরি ছেড়ে দেয়!
মানুষের জীবন বৈচিত্রে ভরা এবং প্রচুর সুযোগ অপেক্ষা করছে মানুষের জন্য। একটি চাকরিতে যোগদানের পর সেটি তার জন্য আদর্শ চাকরি মনে হলেও অনেক সময়ই তাকে সেটি ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করতে হয়। এটি শুধুমাত্র টাকা বা অবস্থানের জন্যই নয়। দক্ষ কর্মী হওয়া সত্ত্বেও একজন মানুষ কেন তার পছন্দের চাকরি ছেড়ে দেয় তার কয়েকটি কারণ জেনে নিই চলুন।
১। দূরদর্শী কর্ম-পরিকল্পনার অভাব
অধিকাংশ কর্মচারীই তাদের কাজ সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকতে চায়। তারা চায় প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে কী ধরণের কাজ করতে হতে পারে সে সম্পর্কে একটি নিশ্চিত ধারণা। তারা নিশ্চিত থাকতে চায় এই কাজের জন্য তারা ঠিক কতো পারিশ্রমিক পেতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত থাকতে চায়।
ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের দূরদর্শী পরিকল্পনা কর্মচারীদের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হলে সাধারণত কর্মচারীরা সে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। একই সমস্যা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরও প্রকট।
২। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্ম পরিচালনার সুবিধার্থে একটি নির্দিষ্ট মিশন বা উদ্দেশ্য ধার্য করে থাকে। এই উদ্দেশ্যটি যথা সম্ভব সহজ উপায়ে কর্মীদের সামনে তুলে ধরতে হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে জনমনে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকলে তা কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ জোগায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, গুগল (Google) এর কথা। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই কোনো ধারণা নেই। কিন্তু এই সংস্থাটির উদ্দেশ্য, ‘বিশ্বের সকল প্রকার তথ্য সংগঠিত করা এবং তা বিশ্ব জুড়ে সহজলভ্য ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা’ যা আমাদের সবার কাছেই খুব সহজবোধ্য ও সুস্পষ্ট।
৩। অসম্মানিত এবং তুচ্ছ বলে পরিগণিত হওয়া
যখন প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে একটি সংখ্যা মনে করা হয় এবং তার সাথে অমানবিক আচরণ করা হয় তখনই তার এই কাজের প্রতি বিরক্তি চলে আসে। কখনো কখনো নিয়োগকর্তারা প্রতিষ্ঠানের লাভ ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়েই শুধু চিন্তা করেন। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য এটি অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিন্তু কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করলেও তা অর্জন করা অসম্ভব। কর্মীরা যেহেতু মানুষ তাই তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য মর্যাদা ও প্রেরণা দেয়া প্রয়োজন। এরকম করা সম্ভব হলেই কাজের মানের বৃদ্ধি হয় এবং বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ লাভবান হতে পারেন।
৪। দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা না করা
সব মানুষই চায় তার ক্যারিয়ারের উন্নতি হোক। কর্মীরা চায় ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে। তারা যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে সেই প্রতিষ্ঠানটির এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদেরও অগ্রগতি হোক এটাই তারা আসা করে। চাকরি ক্ষেত্রে অগ্রগতির সম্ভাবনা না থাকলে কর্মী সেই প্রতিষ্ঠানে থাকতে চায়না বরং আরও ভালো সুযোগের সম্ভাবনা আছে যেখানে সেখানে চলে যায়। আদর্শ ব্যবস্থাপকেরা প্রত্যেক কর্মীর বিশেষ গুণকে তুলে আনেন। এজন্য ইতিবাচক কৌশল গ্রহণে উদ্যোগী হন। যে বস বা প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হন তাদের প্রতি আগ্রহ হারান কর্মীরা।
৫। অসমতা
বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় যেখানে সেখানে কর্মীরা বেশিদিন থাকতে চান না। এমনকি বছর না ঘুরতেই তারা সেটি ছেড়ে চলে যান। সময় পরিবর্তিত হয়েছে। তাই কর্মক্ষেত্রে অসমতা থাকলে এখন কর্মীদের ধরে রাখাটা কঠিন। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য সহকর্মীর পদোন্নতিতে যোগ্য ব্যক্তি হতাশ হন এবং এই চাকরি ছেড়ে দেয়ার মনোভাব পোষণ করেন।
৬। অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেয়া
আন্তরিক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মীরা নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। কিন্তু বস বা প্রতিষ্ঠান তাদের দিয়ে ক্রমাগত অতিরিক্ত খাটুনি খাটিয়ে নিলে বিষিয়ে উঠে কর্মীর মন। এতে তাদের উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কর্মী এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিমুখ হয়ে উঠে।
৭। একঘেয়েমিতা
কর্মীদের কাজের পরিমাণ নির্ভর করে কর্ম পরিবেশের উপর। একটি নির্দিষ্ট ডেস্কে বসে একনাগাড়ে কাজ করে যেতে হলে কর্মীদের কাজের গতি ধীর হয়ে যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কর্মীরা অলস। একই জায়গায় বসে গতানুগতিক বিষয় নিয়ে অনেক সময় ধরে কাজ করার ফলে এমনটা হয়ে থাকে।
৮। মূল্যায়ন না করা
সবাই প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। তাই কর্মীদের কাজের মানের উন্নতিতে তাদের যোগ্য প্রশংসা করা উচিৎ। যারা নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের যথাযথ প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া বস ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। আর তা না হলে সেরা কর্মীরা চলে যেতে বাধ্য হন।
যারা কর্মক্ষেত্রে অসুখি থাকে তারা নৈরাশ্যবাদী ও রুঢ় আচরণ করে এবং কাজ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাহানার কথা বলে। আস্তে আস্তে সে এই কাজ থেকে বাহির হয়ে যেতে চায়। কাজের পরিবেশ নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও উপভোগ্য হতে হবে। অভিজ্ঞ স্টাফ যখন প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যায় তখন তা প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতির কারণ হয়।