আর্কাইভ থেকে এশিয়া

যে হাসপাতালে শুধু পুতুলের চিকিৎসা হয়!

হাসপাতালটি  হঠাৎ দেখে চমকে যেতেই হবে! হাসপাতালের ওয়ার্ড, বেড। এমনকী, আধুনিকতম চিকিৎসাযন্ত্রও- সব আসল। কিন্তু সেই হাসপাতালের রোগী কে জানেন? পুতুল। তার মধ্যে আবার দু’-একজন কথাও বলে। সুস্থতার নমুনা হিসাবে চোখের পাতা ফেলে।

এত আয়োজনের কারণ হল, নার্সিং-সহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কর্মীদের প্রকৃত প্রশিক্ষণ প্রদান। যাতে পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে কাজে নামতে পারে তারা।

চক্ষু চড়কগাছ করা এই পরিকাঠামটি আছে সিঙ্গাপুরে, নানিয়াং পলিটেকনিকে।

সংস্থাটির সিইও ড. হেনরি হেং, ডিরেক্টর এস্থার বে, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ রাফায়েল লি। সিঙ্গাপুরের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা এটি।

ডিন ডা. ব্রায়েনের মতে, ‘পুরো হাসপাতালের পরিবেশ না দিলে শিখবে কী? আসল মানুষ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার আগেই আমরা ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করে দেই।’

অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে আইসিইউ, ডায়ালিসিস, পেডিয়াট্রিক্স, এমার্জেন্সি, প্রতিটি বিভাগ আলাদা করে। সঙ্গে সব আসল যন্ত্র, ডায়ালিসিসও।

ডিন বললেন, ‘নার্সের কাজ তো শেখানো হয়, পাশাপাশি এমনভাবে তৈরি করে দেয়া হয়, যাতে একাই একশো হতে পারে। তাতে কর্মক্ষেত্রে বিরাট সুবিধে।’

সিইও ড. হেনরির কথায়, ‘তিরিশ বেডের পুরো হাসপাতাল। ইচ্ছে করলে আসল রোগীর চিকিৎসাও সম্ভব।’

রোগী

ডা. ব্রায়েন বললেন, ‘আধুনিকতম চিকিৎসাযন্ত্র না বসালে শেখা অসম্পূর্ণ থাকে। তাই সব বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। এমনকী, শিশুবিভাগে ইনকিউবেটর পর্যন্ত। প্রিম্যাচিওরড বেবির চিকিৎসা।’

হাসপাতালটিতে মানুষ সাইজের পুতুল রোগীরাও বিশেষভাবে তৈরি। কোনওটার মাথায় হাত রাখলে চোখ খুলছে, রেকর্ডেড ভয়েসে কথা বলছে। এমার্জেন্সিতে যেটা জখম হয়ে পড়ে, তার হাত পা ভাঙা। পিছনে পর্দায় জখমের এলাকার ছবি। ভাবা যায়? বিরাট জায়গা জুড়ে এই আয়োজন।

তার মধ্যে একটা আস্ত মডেল ফ্ল্যাট। কলিং বেল থেকে বাথরুম পর্যন্ত। কনসেপ্ট অসাধারণ। বহু প্রবীণকে বাড়িতে থাকতে হয়, অনেকে একা থাকেন। তাদের জন্য টেলিমেডিসিন সার্ভিস থেকে শুরু করে বাড়িতে কী কী চিকিৎসাযন্ত্র থাকবে, এমনকী, বিশেষভাবে তৈরি দরজা, আসবাব দিয়ে তৈরি মডেল ফ্ল্যাট। পেল্লায় ডিপার্টমেন্টের মধ্যেই আস্ত ঝকঝকে ফ্ল্যাট, কেউ যেন থাকেন। পা দিয়ে খোলার ফ্রিজ, যাতে হুইল চেয়ারে বসেও কাজ করা যায়। রান্নাঘরে উপর থেকে কৌটোবাটা নেমে আসার প্রযুক্তি, উঁচু থেকে পাড়তে হবে না। এপাশে রক্তচাপ, সুগার মাপার মেশিন। এই ফ্ল্যাটে নার্সিং ক্লাস হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসও হয়। কোভিড বা সংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকার আয়োজনও রয়েছে এখানে।

ডিন বললেন, ‘‘আই হোল দিয়ে কে এল দেখতে বয়স্কদের অসুবিধে হয়। তাই অন্য ডিজাইন।’’

চিন থেকে শুরু করে বহু দেশ নানিয়াং-এর সাহায্য নিচ্ছে বাস্তবতার তাগিদ থেকেই। আসল যন্ত্র দিয়ে ডামি রোগীর আসল হাসপাতাল ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সিঙ্গাপুর, এমনকী, মেডিক‌্যাল কলেজও নানিয়াং মডেল নিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে জুনিয়র ডাক্তারদেরও সুবিধে হচ্ছে। আসল হাসপাতালে আসল রোগী দেখে পড়ার সময় তাদের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির উপর সেভাবে পরীক্ষা করা যায় না। একেকজন ছাত্র বেশি সময়ও পায় না। কিন্তু এই মডেলে সময় দিয়ে সবরকম পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শেখা সম্ভব। একটি ওয়ার্ডে তো ডামি রোগীর সঙ্গে নার্সিং ছাত্রের কথোপকথনের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা আছে। গোটা প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য। একাধিক দেশে উচ্চমানের নার্সিং ও চিকিৎসাকর্মী সরবরাহ করছে নানিয়াং।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন