আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, ঢাকাসহ একদিনে ৩৬ শনাক্ত (অডিও)

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মেয়েকে হাসাপাতালে ভর্তি রেখে অসহায় বাবা সাংবাদিক শিপন হাবীব। মেয়েকে ভর্তি রাখা আইসিইউতে। দরকার পরেছে রক্তের। মেয়ের সুস্থতায় পাগল প্রায় বাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন মেয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

মেয়ের জন্য শিপন হাবীবেব ফেইসবুক স্ট্যাটাস পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

“আমার পাপা ডেঙ্গু আক্রান্ত হ‌য়ে, এখন আই‌সিইউ‌তে। আমার পাপা, পান্থপথ স্কয়ার হাসপাতাল আই‌সিইউ‌তে ভ‌র্তি আ‌ছেন। এ প‌জে‌টিভ রক্ত লাগ‌বে। আমার পাপা, আমার দু‌নিয়া। আমার দু‌নিয়া‌কে সহ‌যো‌গিতা করুন, রক্ত দিন। আ‌মি আমার পাপা থে‌কে সব শি‌খি, ভদ্রতা আর বিনয়ী শি‌খি। আমার জীব‌নে আ‌মি অ‌নেক মানুষ‌কে ভা‌লো‌বে‌সে‌ছি, রাত‌দিন কা‌ছে থে‌কে‌ছি, দি‌নের পর দিন কান্না ক‌রে‌ছি। আমার পাপার জন্য , আপনার দু‌চো‌খের এক ফুটা অশ্রুও চাই, সৃ‌ষ্টিকর্তার কা‌ছে চো‌খের জল, সব‌চে‌য়ে মূল্যবান, প্রিয়।”

সাংবাদিক শিপন হাবীবের মতো আক্রান্তদের পরিবারের অভিব্যক্তি একই। করোনা মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভয়াবহতা আমাদের সামনে তেমন আসছে না। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার(৭ জুলাই) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদা নাসরীন বাবলী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গেলো ২৪ ঘণ্টায় (৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৮ জুলাই সকাল ৮টা) নতুন ৩৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর এদের সবাই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যই জানানো হয়েছে

সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৬ জনের মধ্যে ৫ জন সরকারি হাসপাতাল এবং বাকি ৩১ জন বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই জন ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং তিনজন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকাদের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল তিন জন, বারডেম হাসপাতাল ও ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে একজন করে দুই জন, ধানমন্ডি স্কয়ার হাসপাতালের দুই জন, ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে তিন জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল হাসপাতালে তিন জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে সাত জন, খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতাল চার জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন, আদ-দ্বীন মেডিকেল ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জন করে দুই জন, আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৫১ জন রোগী। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৪৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই জন।

এতে আরও বলা হয়, চলতি বছর মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়া ৬০১ জনের মধ্যে কেবল জুলাই মাসের ৮ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২৩০ জন।

এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণের এই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গুকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বৃষ্টিতে পানি জমে থাকছে। এ কারণে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা কিছুটা বাড়ছে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সারাদেশে সিভিল সার্জনদের কাছে পর্যাপ্ত এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিতসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডীন ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান,  অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, করোনার মহামারি এবং   ডেঙ্গুর প্রকোপ এক সংগে শুরু হয়েছে এ কারণে জ্বর হলেই করোনা এবং ডেঙ্গু দুইই পরীক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন জ্বর হলে যেন বাসায় বসে না থাকে। এবং নিজে নিজেই যেন কোন ওষুধ সেবন না করেন। বিশেষ কোরে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে এ নিয়ে বেশি সচেতন হতে হবে।জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেরি হলেই রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

তিনি বলেন, এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যায় নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, বাড়ি করার জন্য নির্মিত গর্ত, টব, বোতল ও লিফটের গর্তে। এসব জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাতো বটেই চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন তারা।  

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন