আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

জুট করপোরেশনের ১৯০ একর জমি বেদখলে

বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের (বিজেসি) ৬৪ শতাংশ জমি বেদখলে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির মোট জমির পরিমাণ ২৯৫ দশমিক ১৭৯৬৫ একর। এর মধ্যে বেদখলে রয়েছে ১৯০ দশমিক ০৪৫৭৫ একর (৬৪ দশমিক ৩৮ভাগ)। সংস্থাটির দখলে আছে ১০৫ দশমিক ১৩৩৯ একর (৩৫ দশমিক ৬২ ভাগ)।

সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীসহ এসব সম্পত্তি ৮৬৩ জন ব্যক্তির দখলে রয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও মন্দিরের দখলেও রয়েছে কিছু সম্পত্তি।

আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

কমিটির সভাপতি মির্জা আজমের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাট-মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহীন আক্তার খাদিজাতুল আনোয়ার, তামান্না নুসরাত (বুবলী) এবং মোহাম্মদ হাবিব হাসান।

বৈঠকে বিজেসি’র বেদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি অবৈধ দখলে থাকা অব্যবহৃত জমি বিক্রি করে অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৫৩ দশমিক ০৯৫ একর সম্পত্তির মধ্যে দখলে বেদখলে ২৪ দশমিক ৫৯ একর। রংপুর অঞ্চলে ১৭৫ দশমিক ৪৭৫৬ একরের মধ্যে বেদখলে ১২৯ দশমিক ৫১৫৮ একর। খুলনা অঞ্চলের ৩১ দশমিক ০২৭৬ সম্পত্তির মধ্যে বেদখলে ১৮ দশমিক ৯১৪৪ একর। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও হবিগঞ্জে মোট ৩৫ দশমিক ৫৮১৪৫ একর সম্পত্তির মধ্যে বেদখলে ১৭ দশমিক ০২৫৫৫ একর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই সম্পত্তি ৮৬৩ জন ব্যক্তি বা তাদের ওয়ারিশদের দখলে রয়েছে। এছাড়া, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, সামাজিক সেবাসংঘ, সরকারি কসাইখানা, বিহারী ক্যাম্প, পৌরসভা, বাজার, চেম্বার অব কমার্স, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, ফায়ার স্টেশন, খাদ্য গুদাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস, পোস্ট অফিস, টেলিফোন অফিস, স্থানীয় ক্লাবের নামেও বিজেসির সম্পত্তি দখলে রাখা হয়েছে। কিছু জমি নদীয় গর্ভে বিলীন হয়েছে। বেশকিছু জমি ‘ক’ তফসিলভুক্ত (সরকারি খাস খতিয়ান) হয়েছে।

সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আনিসুল হকের (১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী) ওয়ারিশদের তিনটি দাগে এক একর ৭০ শতাংশ জমি দখলে রয়েছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানের দখলে তিন একর ৩৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বলাশপুর মৌজার শূন্য দশমিক ৩৮ একর সম্পত্তির একটি অংশ উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দখলে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। তবে নাম উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিজেসির অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৭৯৭টি বাসাবাড়ি, এক হাজার ৯২৪টি গাছ, ৬২টি অফিস ঘর, ১২০টি গুদামঘর, ২১টি কাচা প্রেস, ২৯টি দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯টি, মসজিদ ১টি, মন্দির ১টি ও মেশিনারিজ রয়েছে দুটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজেসির মোট ২৯৯টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি, হাইকোর্টে ৮৬টি ও জর্জ কোটে ১৮৭টি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির ১৫২টি অডিট আপত্তি রয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লেষ অর্থের ৮১২ কোটি ৭০ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮৩ টাকা।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বৈঠকে বিজেসি’র বেদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি দখলকৃত জমির সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করে অবৈধ দখলে থাকা অব্যবহৃত জমি বিক্রয় করে অর্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন