আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে আগের মতোই

১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিরতি দিয়ে আগামীকাল ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত পুনরায় কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে চলে যাচ্ছে দেশ। এ সময় কিছু বিধিনিষেধ মানার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

এদিকে, ঈদের পরদিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে না পারলে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন। অর্থাৎ আজ ফিরতে না পারলে সবাইকে বাড়িতেই থাকতে হবে। আগামীকাল ২৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই ইস্যুতে কোনো গুজবে না দেয়ার আহ্বান জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। 

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। 

মাঠে থাকবে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী

লকডাউন শিথিল হবে না।  গতবারের চেয়ে কঠিন হবে এবার। লকডাউন চলাকালে বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। এই লকডাউনে অফিস-আদালত, গার্মেন্টস-কলকারখানা ও রপ্তানিমুখী সবকিছুই বন্ধ থাকবে। কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে আগের মতোই।

প্রজ্ঞাপনে দেয়া যেসব বিধিনিষেধ মানার কথা বলা হয়েছে

১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল-মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।

৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন।

১০. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১১. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল ও ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১২. বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১৩. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৪. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা-সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্সাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি-অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট বা প্রমাণক প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।

১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। 

২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।  

আইন অমান‌্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব‌্যবস্থা নেবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। করোনারোধে স্বাস্থবিধি মেনে চলাসহ অপ্রয়োজনে বাসা বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন‌্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন