ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পদ পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা ও তার অনুসারী তাবাসসুম ইসলামের মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আরও ৪ ছাত্রী। এর আগে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) নবীন এক ছাত্রীকে হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে রাতভর নির্যাতন ও ভিডিও ধারণা করেন তারা।
পরে এ ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্ত এই দুই নেত্রী। এরপরই শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আরও চার ছাত্রী তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন।
তারা বলেন, সানজিদা-তাবাসসুমের ভয়ে নির্যাতনের শিকার কোনো ছাত্রী মুখ খুলত না। হলে থাকতে গেলে তাদের নির্যাতন সয়ে নিতে হতো।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি হলের মধ্যে তিনটি মেয়েদের। এর একটি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল। হলটির ৪০৮ নম্বর কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সানজিদা, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আর তাবাসসুম থাকেন একই হলের গণরুম প্রজাপতিতে। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেলো বছরের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। সেখানে সানজিদা সহসভাপতি পদ পান। ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী সানজিদা। এ জন্য অল্প সময়ে তিনি পদ পেয়ে যান। পদ পাওয়ার পর থেকে হলের সবকিছুতেই তিনি দাপট দেখাতে শুরু করেন।
হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ব্যক্তিগত একটি বিষয় নিয়ে সানজিদা হলের অতিথিকক্ষে (গেস্টরুম) তার বন্ধুদের ডেকে অপমান করেছিলেন। পাশাপাশি তার বাড়িতে মায়ের কাছে ফোন করে কুৎসা রটিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, অত্যন্ত নোংরা কথা সবার কাছে বলে বেড়ানোয় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
ছাত্রীরা জানান, হলের যে কক্ষে সানজিদা থাকেন, সেখানকার বারান্দায় যাওয়াও নিষেধ। তাঁর সামনে কেউ গেলে মাথা নিচু করে থাকতে হয়। নইলে অপদস্থ হতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করা এক শিক্ষার্থী বলেন, মাস তিনেক আগে একটি বিষয়ে সানজিদার সঙ্গে তার তর্ক হয়েছিল। তখন সানজিদা তাকে বলেন, তার কাছে ওই ছাত্রীর ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিও রয়েছে। সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সহসভাপতি হওয়ার পর সানজিদা তার ১৫ থেকে ২০ জন অনুসারী নিয়ে হলের নিয়ন্ত্রণ নেন। এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর সোমবার দিবাগত গভীর রাতে তিনি জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বাইরে বের করেন।
ছাত্রলীগ সানজিদার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকীর কাছে সানজিদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেটা তদন্ত সাপেক্ষে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্যাতনের শিকার ওই নবীন ছাত্রী ও তার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাকে আসতে বলেছি, ক্যাম্পাসে তার নিরাপত্তা দেয়া হবে।