আর্কাইভ থেকে জাতীয়

নতুন নীতিমালা হচ্ছে কবরস্থান নিয়ে

নতুন নীতিমালা হচ্ছে কবরস্থান নিয়ে

এখন থেকে আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মীয় স্থাপনা ও কবরস্থান বা শ্মশান তৈরি করা যাবে না। এসব তৈরি করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া এসব স্থাপনা নির্মাণে উদ্যোক্তার আয়ের উৎসও জানাতে হবে সরকারকে। রোববার (২৯ আগস্ট) সংসদীয় কমিটির সুপারিশে এমন বিধান করে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
 
সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নীতিমালা তৈরি করতে ৯ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
 
এতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ধর্মীয় স্থাপনা, কবরস্থান/শ্মশান স্থাপন না করা, এসব স্থাপনা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমতি গ্রহণ, খাসজমিতে এসব স্থাপনা তৈরি না করা এবং প্রস্তাবিত ইউনিয়ন পরিষদের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় স্থাপনা ও বাড়িঘর নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদকে জানানোসহ কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
 
সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং কবরস্থান/শ্মশান স্থাপনে সরকারের অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়।
 
গেল ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ এবং কবরস্থান স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে।

এতে বলা হয়েছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাকা/স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তৈরি করা প্ল্যান ও ডিজাইন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান সেটা যৌক্তিক মনে করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠাবেন। ওই আবেদন উপজেলা সমন্বয় সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
 
ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণে পৃথক কমিটি থাকবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপদেষ্টা, নির্বাহী অফিসার সভাপতিসহ ৮ জন, পৌরসভার ক্ষেত্রে মেয়র সভাপতিসহ ১০ সদস্য, সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সভাপতিসহ ৭ জন সদস্য থাকবে। প্রত্যেক কমিটির কার্যপরিধিও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
 
এতে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সরকারি/খাস জমিতে এবং পরিত্যক্ত/অর্পিত সম্পত্তিতে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/অন্যান্য স্থাপনা ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করা যাবে না। অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের স্থাপনা হলে তা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি নির্মাতাকে জবরদখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্তকরণের বিষয়টি বিবেচনা করে এ ধরনের স্থাপনা রাস্তা থেকে যৌক্তিক দূরত্বে নির্মাণ করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণের জন্য কোনো জমি ওয়াকফ, দান, কেনা বা আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করা যাবে। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকলে নির্মাণ করা যাবে না।
 
সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান নির্মাণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার বা যৌক্তিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঈদগাহ উন্মুক্ত স্থানে থাকবে। বছরের অন্য সময়ে ঈদগাহগুলোতে ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ রাখতে হবে।
 
ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আয়ের উৎস জানাতে হবে এবং তিনি আয়কর দেন কি না তা বিবেচনায় আনতে হবে।
 
মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৬’ যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।
 
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটি প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণে একটি করে কবরস্থান স্থাপনের জন্য নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করে।
 
কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বপন ভট্টাচার্য্য, মশিউর রহমান রাঙ্গা, শাহে আলম, ছানোয়ার হোসেন এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী অংশ নেন।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নতুন | নীতিমালা | হচ্ছে | কবরস্থান | নিয়ে