আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সেই মিনুর ট্রাকচাপায় মৃত্যুর ঘটনা ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্তের নির্দেশ

সেই মিনুর ট্রাকচাপায় মৃত্যুর ঘটনা ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্তের নির্দেশ

চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেল খাটা মিনুর ট্রাকচাপায় মৃত্যুর ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করতে দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মৃত্যুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং গ্রেপ্তার হওয়া মূল আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তা হাজিরের পর বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো.আতোয়ার রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ নির্দেশনা দেন।

আদালত দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশে বলেন, কেন সে রাত তিনটায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেল। তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা অথবা শুধুই আটকরাই প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কিনা, নাকি অন্য কেউ আছে-এসব বিষয় সিরিয়াসলি তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নেবেন।

পরে তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য দিন রাখেন। ওই দিন এ ঘটনায় তলব করা চট্টগ্রামের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকতে হবে।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট তাদের নথিসহ হাজির থাকতে বলেন আদালত। সে অনুযায়ী দুই তদন্ত কর্মকর্তা হাজির হন।

তাদের সঙ্গে যুক্ত হন চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরাও।

আদালতে মিনুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। দুই তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।

সন্তানদের ভরণপোষণের আশায় মূল আসামির পরিবর্তে কারাবরণ করতে রাজি হন মিনু। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বদলে ৩ বছর ধরে খেটেছেন কারাবাস। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তদন্ত বেরিয়ে আসে এমন অমানবিক গল্প।

চলতি বছর ৭ মে বদলি জেল খাটা চট্টগ্রামের মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। আদালতে নির্দেশে ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার।

আসামি বদলে নিরাপরাধ নারীর কারাবাসের ঘটনাকে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে ঘৃণ্যতম প্রতারণা বলে মন্তব্য করেন উচ্চ আদালত।

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চতুর নারী কুলসুম আক্তার কুলসুমার প্রলোভনের ফাঁদে পড়েন দুই সন্তানের জননী মিনু আক্তার। দ্রুত মুক্ত করা এবং সন্তানদের ভরণপোষণের শর্তে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কুলসুমার বদলে জেলে যান তিনি।

এরপর তিন বছর জেল খাটেন মিনু। এ সময় সন্তানদের ভরণপোষণতো মেলেনি উল্টো দীর্ঘায়িত হয় তার কারাবাস। তখনই হুঁশ হয় মিনুর। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানালে শুরু হয় তদন্ত। আদালতের তদন্তে বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনা।

ওই সময় দেশের উচ্চ আদালত মিনুকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। নিরাপরাধ মিনুকে জেল খাটানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপিসহ তিনজনকে তলব করেন আদালত।

তবে জেল থেকে মুক্তির ১৩ দিনের মাথায় ২৬ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোডে ট্রাকের চাপায় মৃত্যু হয় মিনু আক্তারের।

ঘটনাস্থলের সেই রাতের সিসিটিভি ভিডিও তারা খতিয়ে দেখছে। সেখানে রাস্তায় মিনুকে ‘অস্বাভাবিকভাবে’ হাঁটতে দেখা যায়। ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার আগে সড়কে দায়িত্বরত টহল পুলিশের সদস্যরা তাকে দুইবার সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।

মামলার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পোশাক শ্রমিক কোহিনুর আক্তার পারভীনকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনুর আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন সহকর্মী (পোশাক শ্রমিক) কুলসুম আক্তার কুলসুমা। পরে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন জমা দেয়।

২০১৭ সালে নভেম্বর তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে পারভিন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমার পরিবর্তে মিনু ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নন বলে জানান। 

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মিনুর | ট্রাকচাপায় | মৃত্যুর | ঘটনা | গুরুত্বের | সঙ্গে | তদন্তের | নির্দেশ