আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

ইছামতিতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

ইছামতিতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

লকডাউনে ঘরবন্দি থেকে মানুষ যখন বিরক্ত হয়ে পড়েছে তখন ঝিমিয়ে পড়া মানুষদের একটু বিনোদন দেয়ার জন্যই ঢাকার নবাবগঞ্জের দেওতলা ইছামতি নদীতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। 

শুক্রবার (১ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার দেওতলা নবারুন সংঘ এ নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান।

নৌকা বাইচকে উপলক্ষে করে নদীর দুইধারে বসে গ্রামীণ মেলা। বাইচ দেখতে ইছামতি নদীর দুপাশে হাজির হয়েছিল স্থানীয়সহ আশেপাশের উপজেলার প্রায় অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন পর  এমন আয়োজন দেখে খুশি তারা। ইঞ্জিনচালিত ও পানসি নৌকা নিয়ে নদীতেও ছিল মানুষের উপস্থিতি। কোনো কোনো নৌকায় উচ্চ শব্দে বাজছিল গান। বাইচে আগত দর্শনার্থীরা ঢোল, তবলা নিয়ে নেচে গেয়ে এক বর্নিল পরিবেশ সৃষ্টি করে এলাকাজুড়ে। দর্শকের টান টান উত্তেজনার মধ্যেই বাইচের নৌকার মাঝিরা হাঁক দিলেন হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো। দর্শকদের হর্ষধ্বনি আর হাততালি বাড়তি উৎসাহ জোগায় নৌকাগুলোকে। 

নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় খান বাড়ি, শেখ আব্দুল খালেক, কালচান রকেট, জয়বাংলা, হাতনীর রাজ ও উড়িয়া বাজসহ ১০ নৌকা অংশগ্রহণ করেন। নৌকা বাইচে খান বাড়ি নৌকা চ্যাম্পিয়ন ও শেখ আব্দুল খালেক রানার্স আপ হয়।

দেওতলা নবারুন সংঘের সভাপতি মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা নৌকাবাইচের আয়োজন করতাম। তবে করোনার কারনে গতবার আয়োজন করতে পারি নাই। আশা করি এখন থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর নৌকাবাইচের আয়োজন করতে পারব।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, এক সময় নবাবগঞ্জ ও দোহারসহ আশেপাশের অনেক স্থানেই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হত। বিভিন্ন সমস্যার কারনে বেশির ভাগ নৌকা বাইচই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে। তাই কষ্ট হলে সবাই মিলে নৌকা বাইচের এই আয়োজন। 

তিনি আরো বলেন, নদীতে পানির স্বল্পতার কারণে নবাবগঞ্জে এখন নৌকা বাইচের আয়োজন করাই কষ্টসাধ্য। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে একটু দৃষ্টি দেবে।

মানিকগঞ্জ থেকে বাইচ দেখতে আসা গফুর মোল্লা বলেন, ‘আগে আমগো ওখানে বাইচ মিলাইতো (বাইচ হতো)। এহন আর হয় না। ছোটকাল থাইকা বাইচ দেখি। হের লাইগা নাতিরে নিয়া চইলা আইছি।’

আরেক দর্শক হানিফ কাজি। তিনি এসেছেন মুন্সিগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, ‘আগে নিজেই মাঝি হিসেবে বাইচে নামতাম। এহন বয়স হইছে হের লাইগা আর খেলি না। তবে বাইচের কতা হুনলে মন ছুটে যায়। তাই দেখবার আইছি। 

নৌকা বাইচ ঐহিত্য রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, নৌকা বাইচ আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য। এটা যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য আমরা কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইছামতির পদ্মার অভিমুখে যদি সুইচগেট নির্মাণ করা হলে ইছামতি নদীতে পানির সমস্যা দূর হতো। তবে আরও কয়েকস্থানে নৌকা বাইচের আয়োজন করা সম্ভব হতো।

দেওতলা নবারুন সংঘের সভাপতি মাসুদ মোল্লা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ ঝিলু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান কিসমত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালালউদ্দিন সহ আরও অনেকে। প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কার ছিল মোটর সাইকেল। এছাড়া ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেয়া হয়।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ইছামতিতে | ঐতিহ্যবাহী | নৌকা | বাইচ