ডিজিটাল সুদের কারবারের আড়ালে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের নাম ইমান্যুয়েল অ্যাডওয়ার্ড গোমেজ, শুভ গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনুর আলম ওরফে রাজীব এবং মো. আকরাম। গ্রেফতারকৃতরা অ্যাপস ব্যবহার করে ঋণ দিয়ে সুদের নামে টাকা হাতিয়ে নিতো। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে, রাজধানীর মিন্টো রোডে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
ডিএমপি’র গোয়েন্দা প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অবৈধভাবে ‘থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউ ভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। অনলাইনে Tkala–Personal Loans Online (Tkala.Thala-0430), Cashman (Cashman-0514, Cashman-0326), RapidCash- Quick Online eLoans App, AmarCash-Personal Loans Online, Cashkash-Fast Loans Online, ও CashCash নামে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ দেয়।
অ্যাপসগুলো ফেইসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। মূলত অর্থ সংকটে পড়া স্বল্প আয়ের মানুষ এবং বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করা হয়। টার্গেটকৃত গ্রাহকরা বিজ্ঞাপনে লিংকে ক্লিক করে অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করে। এরপর গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নাম্বার,পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফোন নাম্বার ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে একাউন্ট খোলা হয়।
চাহিদা অনুযায়ী আবেদনের প্রেক্ষিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রসেসিং ফি নিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ নির্ধারন করে স্বল্প সময়ের (৩ থেকে ৭ দিনের ) জন্য ঋণ দেয়। গ্রাহক ৩০০০ টাকার জন্য আবেদন করলে প্রসেসিং ফি বাবদ ৮১০ টাকা কেটে রেখে গ্রাহককে মাত্র ২১৯০ টাকা দেয়া হয়। কিন্ত ৭ দিন শেষে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় মোট ৩,০১৮ টাকা। মেয়াদ শেষে অনাদায়ে প্রতিদিন হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ আদায় করা হয়।
এ ছাড়াও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখার যুক্তি দেখায়। টাকার পরিমাণ যতো বেশি, টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও তত বেশি। এ ঋণের টাকা গ্রাহককে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
এখাতে অর্থ লেনদেনে কোনো কোন ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। কেউ ঋণ নিয়ে যাতে ফাঁকি দিতে না পারে সেলক্ষ্যে অ্যাপস ইন্সটল করার পর গ্রাহকের ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়ে নেয় প্রতারকরা। পরে দূর নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা মোবাইলের কন্টাক্টসহ মোবাইলের এক্সাক্ট লাইভ লোকেশন নির্ণয় করে। ফোনের স্ট্যাটাস এবং তথ্য সংগ্রহ করে, ফোনে সংরক্ষিত মেসেজ পড়ে নেয়।
এমন অনেকেই তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। তাদের একজন রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারে এসব কূটকৌশল। তদন্তে জানা গেছে, এসব প্রতারকদের ব্যবহার করা অ্যাপস সূদুর চীন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ চক্রের সাথে বিদেশি নাগরিকরাও জড়িত। তারা দেশের বাইরে টাকা পাচার করে।