করোনাভাইরাসের ২ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রোমানিয়া সরকার।
শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান অরেস্কুর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় টিকা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেয় রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রোমানিয়ার জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।
রোমানিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে মোমেন দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচান হয়। দু দেশের
সম্পর্কের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন দেশদুটির সরকার। আগামী দিনে এ সম্পর্ক বিশেষ করে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করেন তারা।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, রোমানিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নির্মাণাধীন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং প্রতিষ্ঠিত হাইটেক পার্কগুলোতে যৌথ মালিকানায় কিংবা শতভাগ নিজস্ব মালিকানায় বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান মোমেন। রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন।
ড. মোমেন ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রশ্নে রোমানিয়ার সমর্থন প্রত্যাশা করেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়ায় দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি পাঠানোর সম্ভাব্যতা নিয়েও উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন। তারা দুদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মতি জানান।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে রোমানিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মোমেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এসব নাগরিকদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান মোমেন। বোগদান বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং রোমানিয়ার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ে নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকার প্রশংসা করেন। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এফওসি (ফরেন অফিস কন্সালটেশন) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
পরে ড. মোমেন পূর্ব-ইউরোপের বৃহত্তম কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় University of Politehnica of Bucharest (UPB) পরিদর্শন করেন। সেখানে ইউপিবির রেক্টরের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দু'দেশের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ইউপিবি এবং রোমানিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যে 'প্রমোশন অব দি ইউপিবি এক্সসিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম' বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন ইউপিবির রেক্টর এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি স্কলারশিপ ঘোষণার জন্য ইউপিবির রেক্টরকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরের বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে এই স্কলারশিপের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করেন মোমেন। আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য পিস কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য ইউপিবির রেক্টরকে আমন্ত্রণ জানানপররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
মুক্তা মাহমুদ