ইউক্রেনীয়রা দক্ষিণ রাশিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে এবং দুই বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে মস্কো। তবে কিয়েভ এই অভিযোগকে একটি ‘ইচ্ছাকৃত উস্কানি’ হিসেবে প্রত্যাখান করেছে।
রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনীয় বাহিনী নিয়মিতভাবে গোলাবর্ষণ করছে। তবে কথিত অনুপ্রবেশ যদি নিশ্চিত হয় এটি তার ভূখন্ডের অভ্যন্তরে লড়াইয়ের একটি বিরল উদাহরণ হবে।
রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের’ পরে সীমান্তের ওপারে হটিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের লক্ষ্য করে ‘ব্যাপক আর্টিলারি হামলা’ চালানো হয়েছে।
রাশিয়া মূল শহর এবং রেল হাব পুনরুদ্ধার করবে এমন আশঙ্কায় ইউক্রেন ফ্রন্টলাইন শহর কুপিয়ানস্ক এবং সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলো থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেয়ার পরেই রাশিয়া এই অভিযোগ তুলেছে।
বিরোধটি নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জি-২০ বৈঠকেও ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে, তিনি রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই ল্যাভরভকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আক্রমণকারীদের ‘নব্য-নাৎসি এবং সন্ত্রাসী’ হিসাবে অভিযুক্ত করে নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, তারা ‘সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছে এবং বেসামরিক লোকদের উপর গুলি চালিয়েছে’।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক দ্রুত মস্কোর দাবি প্রত্যাখান করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় নাশকতা গোষ্ঠীর গল্পটি একটি ক্লাসিক ইচ্ছাকৃত উস্কানি।’ অন্য দেশের উপর হামলা এবং যুদ্ধের এক বছর পরে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যকে ন্যায্যতা দিতে রাশিয়া তার জনগণকে ভয় দেখাতে চায়।’
এফএসবি বলেছে, ঘটনাটি ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের ক্লিমোভস্কি জেলায় ঘটেছে এবং ‘বড় সংখ্যক বিস্ফোরণের’ খবর পাওয়া গেছে।
আগের দিন, ব্রায়ানস্কের রাশিয়ান অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ বলেছেন, ‘একটি পুনরুদ্ধার এবং নাশকতাকারী দল’ লিউবেচানে নামের একটি গ্রামের কাছে সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
বোগোমাজ জানিয়েছে, হামলায় দুইজন নিহত ও এক শিশু আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচারের সময় একটি বুলেট বের করা হয়।
গভর্নর বোগোমাজ আরও বলেছেন, একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন সুশানি গ্রামে আক্রমণ করেছিল। একটি আবাসিক বাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং মর্টার হামলায় ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের লোমাকোভকাতে দ’ুটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরেক রুশ সীমান্ত অঞ্চলের গভর্নর রোমান স্টারোভয়েট বলেছেন, তেতকিনো গ্রামে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, গোলাগুলিতে তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গ্রামের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
খারকিভ আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ বলেছেন, রাশিয়া কুপিয়ানস্কসহ এলাকার বেশ কয়েকটি বসতিতে ‘শেলিং’ করেছে বলে উত্তর-পূর্বে ইউক্রেনের বসতির লোকদের সরিয়ে নেওয়ার আদেশ এসেছে।
রাশিয়ান সৈন্যরা সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি থেকে পিছু হটেছিল। তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে রাশিয়ানরা পুনরায় কুপিয়ানস্ক দখল করতে পারে।
খারকিভ আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, ‘কুপিয়ানস্ক সম্প্রদায়ের সীমিত গতিশীলতাসহ শিশুদের এবং বাসিন্দাদের সাথে পরিবারগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে।’
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৮৫ মাইল) আরও দক্ষিণে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়ায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে রুশ হামলায় কমপক্ষে তিন জন নিহত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমাদের জনগণের প্রতিটি দিনকে সন্ত্রাসের দিনে পরিণত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘তবে শত্রুরা পুনরায় আমাদের দেশ দখল করতে পারবে না।’ আমরা সমস্ত দখলদারদের তাড়িয়ে দেব এবং অবশ্যই তাদের সবকিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’
ইউক্রেনের উত্তেজনা ভারতে জি-২০ বৈঠকে ব্যাঘাত ঘটায়। ল্যাভরভ সমবেত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বলেছিলেন যে পশ্চিমা প্রতিনিধিরা বৈঠকটিকে লাইনচ্যুত করেছে। এটিকে একটি ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছেন।
তার মার্কিন সমকক্ষ ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তিনি ল্যাভরভকে ‘এই আগ্রাসন যুদ্ধের অবসান করতে, অর্থপূর্ণ কূটনীতিতে জড়িত হতে বলেছেন।’
এছাড়াও কূটনৈতিক ফ্রন্টে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, জার্মানি এবং তার মিত্ররা ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তির প্রস্তুতির জন্য ভবিষ্যতের নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে কিয়েভের সাথে আলোচনা করছে।
জার্মান পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় শোলজ বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে কিয়েভ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কথা বলছি।’