পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ সময় ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্র হয়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় এসে জড়ো হয়। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপরে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন মুসল্লিরা। এসময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন পথচারীসহ সাধারণ জনতা। একপর্যায়ে মুসল্লীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় পৌরসভার আহাম্মদ নগর এলাকায় কাদিয়ানীদের জলসা অভিমূখে নিয়ে রওয়ানা দেয়। এসময় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। পরে সেখান থেকে মুসুল্লিরা পিছু হটে বিক্ষোভ শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় আরিফুর রহমান (২৮) নামে একজন গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রুপুর মেডিক্যাল কলেজ নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হন। নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদ পাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে।
এদিকে, হামলার সময় বিদ্যুতের কয়েকটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পরে মুসল্লিদের একাংশ শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড়ের পৌরসভা এলাকার কাদিয়ানীদের সালানা জলসা অভিমুখে রওনা হয়। এসময় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারী মো আব্দুল্লাহ বলেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবীতে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে বিকেল পৌনে ৪ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করি। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেই। কিন্তু আজকে আমাদের কোনও বিক্ষোভ মিছিল ছিলনা। প্রশাসনের ফোন পেয়ে আমরা তাদের সড়ক থেকে সড়িয়ে নিয়ে চলে আসি। কে বা কারা মিছিল করেছে জানিনা। আমরা কোনও মারামারি বা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করিনি।
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা আয়োজন কমিটির মিডিয়া কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমন বলেন, আমরা প্রতিবছরই সালানা জলসা করি। আমরা কারো কোনও সমস্যা করিনি। হঠাৎ কিছু বিপথগামী লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আমাদের উপর হামলা করে। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা আয়োজক কমিটিকে সালানা জলসা বন্ধ করতে বলেছি। তবে হামলাকারী সনাক্তে আমরা চেষ্টা করছি।