আর্কাইভ থেকে ফিচার

রোজা শুরুর আগে গোসল উৎসব হয় যে দেশে

রোজা শুরুর আগে গোসল উৎসব হয় যে দেশে
সম্পূর্ণ ধর্মীয় আবেগে মাহে রমজান পালন করেন মুসলমানরা। এই রমজান পালনে তারা মেনে চলেন ইসলামী বিভিন্ন বিধি-নিষেধ। তবে এই বিধি নিষেধ মেনেও নিজেদের ঐতিহ্য মেনে রমজান পালন করেন বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা। যেমন ইন্দোনেশিয়া। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। সবশেষ হিসেব অনুযায়ী দেশটির জন সংখ্যা ২৬ কোটিরও বেশি। তাদের মধ্যে ৯০ ভাগই মুসলমান। তবে সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নয়। ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ান মুসলিমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করেন।  মাহে রমজানের চাঁদ দেখার আগে থেকেই। রমজানের ঠিক আগে আগে ইন্দোনেশিয়ার একেকটি অঞ্চলে একেক ধরনের রীতি-নীতি বা ঐতিহ্য লালনের নজির রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার রমজান
ইন্দোনেশিয়ার রমজান
ইন্দোনেশিয়ার বাতেন রাজ্যের ত্যাগেরাং এবং জাভা অঞ্চলে রমজান শুরুর আগে ‘পাডুসান’ নামক এক ঐতিহ্য পালন করা হয়। ‘পাডুসান’ শব্দের অর্থ গোসল করা। এ সময় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ পাহাড় ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে মন ভরে গোসল করে। এই গোসল করার মাধ্যমে তারা নিজেদের শরীর এবং মনকে পবিত্র করে নেয়। যারা পাহাড়ি ঝরনার কাছে যেতে পারে না, তারা স্থানীয় নদী বা প্রাকৃতিক জলাধারে গোসল করে।  এই গোসলের কোনো নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও পরিবার-পরিজনসহ দিনভর বেশ বড়সড়ো একটা জমায়েত হয়। অনেকেই পশ্চিম সুমাত্রায় নদী, হৃদ কিংবা নিজের বাসায় গোসল করেন।  যা ‘বালিমাউ’ নামেও পরিচিত। নেলপ নামের ঐতিহ্য অনুসারে ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ লপাংয়ের কালিয়ান্দা এলাকায়ও রমজান শুরুর আগের দিন স্থানীয় কেটাং কালিয়ান্দা সমুদ্রসৈকত এলাকাবাসী সমুদ্রে গোসল করেন। মাহে রহমানের পবিত্র চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত চলে নিজের দেহ-মনকে পবিত্র করার এই চর্চা। আমাদের দেশে যখন রমজানের ১৪/১৫ দিন আগে শবে বরাত পালন করা হয়। ঠিক তখন  ইন্দোনেশিয়ার  সিমেরাংয়ে মসজিদের পাশ থেকে কামান দাগিয়ে মাহে রমজানের আগমনী বার্তা জানান দেয়া হয়।  স্থানীয়ভাবে এই প্রক্রিয়াকে ডের বলা হয়। সিমারাং’এ  মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় এক ধরনের ঢোল বা ড্রাম বাজিয়ে রমজানের আগমনী বার্তা জানানো হয়। এই ঐতিহ্যকে স্থানীয়ভাবে ‘ডুগ’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এই ‘ডুগ’ এবং ‘ডের’ থেকেই ডুগডিরনের উৎপত্তি। এই সময় বিভিন্ন মসজিদভিত্তিক এলাকা ও সংগঠনের মধ্যে ঢোল বা ড্রাম বাজানোর প্রতিযোগিতা করেন স্থানীয়রা। আর এ কারণেই  জাভা রাজ্যের মধ্যভাগে অবস্থিত সিমারাং শহরটি বিখ্যাত হয়ে আছে ‘ডুগডিরান` নামক এ ঐতিহ্যের কারণে। আধুনিক যুগের কারনে কোথাও কোথাও কামান ব্যবহারের বদলে আতশবাজি বা ফায়ার ক্রেকার্স পোড়ানো হয়। কোনো কোনো এলাকায় গাছের ফাঁপা অংশ বা খোলে বারুদ ভর্তি করে আগুন জ্বালিয়ে বিকট শব্দে জানানো হয় খোশ আমদেদ মাহে রমজান। এই পবিত্র মাসের ঠিক আগে ‘মুংগাহান’ নামের অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজনও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে খাবার খায় স্থানীয়রা। অনুষ্ঠানে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বেশি বেশি এবাদত করার আহ্বান জানান হয়।
ইন্দোনেশিয়ার রমজান
ইন্দোনেশিয়ার রমজান
‘মিউগাং’ নামের ঐতিহ্য অনুসারে রমজানের দু-একদিন আগে পশু জবাই করা হয়।  রমজান মাসের জন্য মাংস সংরক্ষণ করা হয়। প্রায় পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়ে নাইকার বা জিয়ারত পালন করা হয়। রমজানের আগে পূর্ব-পুরুষদের কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং মাসজুড়ে জিয়ারত করা হয়। এ সময় কবরে ফুল দেন অনেকেই। দক্ষিণ সুমাত্রার আরেকটি আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রংবেরঙের মশাল মিছিলের মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানান। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পবিত্রতম রজনী লাইলাতুল কদরকে বরণ করে নিতে হয় এলা এলা উৎসব। শেষ রমজানের ইফতারের পর রাস্তায় বের করা হয় তাকবীর প্যারেড।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রোজা | শুরুর | আগে | গোসল | উৎসব | হয় | দেশে