আর্কাইভ থেকে উত্তর আমেরিকা

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে শামীমার ভাগ্য নির্ধারণী রায় আজ

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে শামীমার ভাগ্য নির্ধারণী রায় আজ

২০১৫ সালে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় গিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠি আইএসে যোগ দেওয়া শামীমা বেগমকে ব্রিটেনে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসি জানায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন একাডেমির ছাত্রী শামীমা বেগম আরও দুই বান্ধবীকে নিয়ে সিরিয়ায় চলে যায়। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। সিরিয়ায় আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে এক আইএস যোদ্ধার সঙ্গে শামীমার বিয়ে হয়। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আল-হওর শরণার্থী শিবিরে তার দেখা পান এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায় শামীমা।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। এতে তার ব্রিটেনে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে আইনি লড়াই শুরু করে শামীমা। ২০১৯ সালে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট এবং স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে আবেদন করে সে। আপিলের শুনানি শেষে আদালত রায় শোনান ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে।

রায়ে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দেন আদালত। ফলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার প্রাথমিক লড়াইয়ে হেরে যায় সে। তবে আদালত বলেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে রাষ্ট্রহীন হয়ে যায়নি শামীমা বেগম। মা-বাবা বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে সে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন করার সুযোগ নেই। তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়নি। তিনি বংশগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক।

আদালত আরও বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের আগে শামীমা বেগম স্বেচ্ছায় ব্রিটেন ছেড়ে গেছে। তাই নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে সে ব্রিটেনের বাইরে অবস্থান করছে বিষয়টি এমন নয়।

বর্তমানে উত্তর সিরিয়ার ক্যাম্প রোজ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে শামীমা। আপিলে যুক্তি দেখিয়ে সে বলেছিল, তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে শরণার্থী শিবিরের মানবেতর পরিবেশেই তাকে আটকে থাকতে হবে। এ পদক্ষেপ ইউরোপীয় কনভেনশনের আওতায় তার মানবাধিকারের পরিপন্থি হবে। কিন্তু আদালত তার যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, শামীমা যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তা তার নিজের দোষে। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে এ দুর্দশায় ঠেলে দেওয়া হয়নি বা তার মানবাধিকারও লঙ্ঘন করা হয়নি।

এরপর আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আপিল প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানান শামীমা বেগমের আইনজীবী। ব্রিটিশ কোর্ট অব আপিল গেল বছরের জুলাইয়ে রায় দেন, নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার জন্য ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে শামীমা বেগম। কেননা, শিবির থেকে মামলার কাজে ঠিকভাবে অংশ নিতে পারছে না সে।

এরপর সুপ্রিম কোর্টকে আপিল আদালতের আদেশের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানায় ব্রিটিশ সরকার। আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে শামীমাসহ এ ধরনের মামলার ভাগ্য।

এখন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন, শামীমাকে আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করতে দেশে ফিরে মামলায় অংশ নিতে দেওয়া একমাত্র ন্যায়সংগত উপায় কি না।

শামীমা বেগমের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছে, শামীমা ন্যায্য প্রক্রিয়ায় শুনানি দেওয়ার সুযোগ না পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বহাল থাকার মামলা জিতে যাবে।

এখন সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি সশস্ত্র সেনা-নিয়ন্ত্রিত শরণার্থী শিবিরে আছে ২১ বছর বয়সী শামীমা বেগম। সেখান থেকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা বা ভিডিওর মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারছে না সে।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ব্রিটিশ | সুপ্রিম | কোর্টে | শামীমার | ভাগ্য | নির্ধারণী | রায় | আজ