আর্কাইভ থেকে ফিচার

খনির কাজে ব্রিটিশদের ধরে নিয়ে যাওয়া মুসলিমদের রোজা-ইফতার

খনির কাজে ব্রিটিশদের ধরে নিয়ে যাওয়া মুসলিমদের রোজা-ইফতার
আজ থেকে প্রায় ৩৫৭ বছর পূর্বে স্পেন থেকে বিতাড়িত হয় একটি মুসলিম পরিবার। অথৈ সাগরে ভাসতে ভাসতে তাদের আশ্রয় হয় দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে। অভিবাসী ওই দলের নেতা ছিলেন শায়খ ইউসুফ সাকিক (রহ.)। তিনিই সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করে আজান দেন। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানের যাত্রা শুরু। দক্ষিণ আফ্রিকায় শায়খ ইউসুফের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামে স্ট্যাম্প ইস্যু করে বাজারে ছাড়া হয়।
সাউথ আফ্রিকার রমজান
সাউথ আফ্রিকার রমজান
এরপর অনেক দেশের অনেক মুসলিম অভিবাসী গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে দক্ষিণ আফ্রিকার খনিগুলোতে কাজ করাতে অনেক মুসলিমদের নিয়ে যায় ব্রিটিশরা।  পরবর্তীতে তাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ী হয়ে যায়। ২০২১ সালে হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ কোটির বেশী মানুষের বসবাস। দেশটিতে প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান বসবাস করে। সাউথ আফ্রিকার প্রথম মসজিদের নাম আওয়াল মসজিদ। এটি প্রায় তিন’শ বছর আগে নির্মিত হয়। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ৫০০ মসজিদ।  ৩০টি ইসলামিক সেন্টার ও ৮৫টি বিভিন্ন ধরনের ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশটির প্রায় মসজিদেই আছে ইসলামি বিষয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের নিজস্ব সংবাদপত্রও রয়েছে। যেমন, আল উম্মাহ  যা ডারবান থেকে প্রকাশিত হয়, আল কলম প্রকাশিত হয় জোহান্সবার্গ থেকে ও আল জমইয়্যা কেপটাউন থেকে প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন শ্রেণী গোষ্ঠির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্মিলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় রমজান পালন করা হয়।  ইফতার, তারাবি ও সেহরিসহ সবকিছুতেই চোখে পড়ে হরেক আয়োজন ভিন্ন উপস্থাপনা। রমজানের আগে ইসলামিক সেন্টারগুলো রমজানের পবিত্রতা, গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা ও সাময়িকী বের করে তা মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করে। মসজিদগুলোতে নেয়া হয় ইফতার ও তারাবির ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি মসজিদেই তারাবির জামাত হয়। নারীরা মসজিদের বাইরে ভিন্ন জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করে। যেখানে মসজিদ নেই সেখানেও ইসলামিক সেন্টারগুলোর উদ্যোগে কোনো হল, কমিউনিটি সেন্টার বা বাড়ি ভাড়া করে তারাবির নামাজের আয়োজন করা হয়। রমজানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানরা সর্বতভাবে অনর্থক ও পাপ পরিহার করে চলেন। যেমন, সিনেমা, নাটক ও নিছক বিনোদনমূলক টিভি সিরিয়াল দেখেন না। প্রতিটি পরিবারে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের খতম করা হয়। রমজান মাসে সাউথ আফ্রিকানরা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে। মরহুম আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করে মৃতদের জন্য দোয়া করে।
সাউথ আফ্রিকা রমজান
সাউথ আফ্রিকা রমজান
মুসলিম সংগঠনগুলো রমজানের আগ থেকেই সমাজসেবামূলক কাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্থানীয় ধনী ও আরব শায়খদের সহযোগিতায় তারা আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন দেশে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করে। মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করে। স্থানীয় পর্যায়ে ও দরিদ্র্য এলাকার মসজিদসমূহে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়। রমজানে বাংলাদেশ মুসলিম সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা নামে বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি সংগঠন গরীব-দুঃখীদেরকে জাকাত ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে। বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা এবং ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন খনির | কাজে | ব্রিটিশদের | ধরে | নিয়ে | যাওয়া | মুসলিমদের | রোজাইফতার