বিশ্বের বৃহত্তম তথ্যকোষ ও ৫ম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়া। এটির প্রতিষ্ঠা ও বিনামূল্যে হওয়ার পিছনে একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা রয়েছে। উইকিপিডিয়ার জনক জিমি ওয়েলস। ছেলেবেলায় জিমি যে কোনো বিষয়ে জানতে আগ্রহী ছিলেন। তার মা তাকে অনেক মোটা মোটা পদার্থ বিজ্ঞান ও বিশ্বকোষের বই কিনে দিতেন। যেন জিমি অনেক বেশি বেশি পড়তে পারেন। কিন্তু জিমির কাছে তখন থেকেই মনে হতো বইটি যত বড়ই হোক না কেন, কিছু না কিছু তথ্য বাদ আছে। সেই বইয়ে সবশেষ তথ্য সংযোজন করা হয়নি।
এর ২০ বছর পর যখন ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়। ঠিক তখনই জিমির মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। কিভাবে পৃথিবীর সব বিষয়ের জ্ঞান এক সঙ্গে একই জায়গায় জড়ো করে রাখা যায়। এরপরই তিনি এটার নামকরণ করেন উইকিপিডিয়া। Wikipedia” (উইকিপিডিয়া) শব্দটি এসেছে হাওয়াই শব্দ “Wiki” উইকি থেকে। যার অর্থ সহায়তামূলক কাজের দ্বারা তৈরি ওয়েবসাইট। আর পিডিয়া শব্দটি নেয়া হয়েছে “Encyclopedia” এর পিডিয়া থেকে।
মার্কিন নাগরিক জিমি ও তার বন্ধু ল্যারি ২০০১ সালের ১২ ও ১৩ জানুয়ারী উইকিপিডিয়ার দুইটি ডোমেইন (wikipedia.com ও wikipedia.org) রেজিস্ট্রেশন করেন। এর দুই দিন পরেই ১৫ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। এ দিনটি তাই প্রতিবছর উইকিপিডিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
প্রথমদিকে উইকিপিডিয়ার উদ্দেশ্য ছিল আর্টিকেল লেখা এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করা। এর মাধ্যমে যে টাকা আসবে, সেখান থেকে সম্পাদকদের বেতন দেয়া হবে। এবং জিমি নিজেদের জন্যও কিছু টাকা রাখবেন। কিন্ত হঠাৎ জিমি সিদ্ধান্ত নেন যে উইকপিডিয়াটি বিনা পয়সায় ব্যবহারের সুযোগ করে দিবেন। কোন বিজ্ঞাপন দেয়া হবেনা। নেয়া হবেনা মাসিক সদস্য ফি কিংবা কোন রকমের কর। এটি কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবেনা। উইকিপিডিয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় শুধুমাত্র বিনামূল্যে জ্ঞান দান। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জিমি মনে করেন তার মতে জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল উইকিপিডিয়া ফ্রি করে দেয়া।
এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিশ্বের সব সম্পাদকরা বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সেখানে জুড়ে দেয়।
জিমি ওয়েলস ২০০৩ সালে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে উইকিপিডিয়া। বর্তমানে বিশ্বের ৩০০টিরও বেশি ভাষায় চালু আছে জ্ঞানের এই বৃহত্তম বিশ্বকোষ।
জিমি মনে করেন, তিনি যদি উইকিপিডিয়ার জন্য মাসিক ১০ ডলার করে নেন, তাহলে ম্যাক্সিকোর মতো অনেক দেশের শিশুদেরই এটি ব্যবহার করার সামর্থ্য হবেনা। যদি বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তাহলে কোম্পানিগুলো কিছু না কিছু বিক্রির চেষ্টা করবে।
উইকপিডিয়া শতভাগ চলে চাঁদার টাকায়। ছোট ছোট পরিমানের চাঁদা দিয়েই উইকিপিডিয়ার খরচ বহন করা হয়। শতকরা ১ ভাগেরও কম ব্যবহারকারী চাঁদা প্রদান করেন। সেই চাঁদাই উইকিপিডিয়া পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। বিলিয়ন ডলার মুল্যের উইকিপিডিয়া বর্তমানে বিশ্বের ৫ নম্বর ওয়েবসাইট। জিমি চাইলে বিলিওনিয়ার হতে পারতেন কিন্তু উনি সব বিলিয়ে দিয়েছেন।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনদুষ্ট | বুদ্ধি | তৈরি | হয় | আজকের | উইকিপিডিয়া