আর্কাইভ থেকে উত্তর আমেরিকা

ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন না শামীমা বেগম: সুপ্রিম কোর্ট

ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন না শামীমা বেগম: সুপ্রিম কোর্ট

২০১৫ সালে লন্ডন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া শামীমা বেগমকে ব্রিটেনে ফিরতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট।

ব্রিটেনের গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, শামীমাকে ব্রিটেনে নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বিচারপতি লর্ড রেড বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে স্বরাষ্ট্রসচিবের সব আপিল মঞ্জুর করে এবং শামীমা বেগমের ক্রস আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তবে, শামীমা বেগম তার নাগরিকত্ব হরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার আবেদন এখনো চালিয়ে যেতে পারেন। তবে তা ব্রিটেনে এসে লড়ার আর সুযোগ নেই।

শামীমা বেগমের হয়ে মামলা লড়া মানবাধিকার সংগঠন লিবার্টি বলছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে। লিবার্টির আইনজীবী রোজি ব্রিজহাউস বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার এভাবে কারো নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে না। যদি কোনো সরকারকে সুষ্ঠু বিচারের মৌলিক সুরক্ষাগুলি ছাড়া নিষেধাজ্ঞার মতো চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তা একটি খুবই বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে।

বিবিসি জানায়, আইএসে যোগ দিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে দুই বন্ধুকে নিয়ে সিরিয়ায় পালিয়ে যান পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন একাডেমির ছাত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা। সিরিয়ায় আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে এক আইএস যোদ্ধার সঙ্গে শামীমার বিয়ে হয়। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আল-হওর শরণার্থী শিবিরে তার দেখা পান এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায় শামীমা।

পরে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে তার ব্রিটেনে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে আইনি লড়াই শুরু করেন শামীমা। আইনি লড়াইয়ের জন্য দেশে ফেরার আবেদন করেছিলেন তিনি।

২০১৯ সালে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট এবং স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে আবেদন করে সে। আপিলের শুনানি শেষে আদালত রায় শোনান ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে।

রায়ে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দেন আদালত। ফলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার প্রাথমিক লড়াইয়ে হেরে যায় সে। তবে আদালত বলেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে রাষ্ট্রহীন হয়ে যায়নি শামীমা বেগম। মা-বাবা বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে সে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন করার সুযোগ নেই। তবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়নি। তিনি বংশগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক।

আদালত আরও বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের আগে শামীমা বেগম স্বেচ্ছায় ব্রিটেন ছেড়ে গেছে। তাই নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে সে ব্রিটেনের বাইরে অবস্থান করছে বিষয়টি এমন নয়।

এখন উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন ২১ বছরের শামীমা। সেখান থেকে তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না তিনি।

সিরিয়ায় আইএস উৎখাত অভিযানে আশ্রয়হীন হয়ে শামীমার ঠাঁই হয় শরণার্থী শিবিরে। সেখানে তার একটি সন্তানও জন্মেছিল। খাবারের অভাবে পরে মারা যায় শিশুটি।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ব্রিটেনে | ফিরতে | পারবেন | শামীমা | বেগম | সুপ্রিম | কোর্ট