জব্দ হওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তার পক্ষে রিটটি দায়ের করেছেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে গেলো ১২ আগস্ট সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ব্যাংকগুলোকে দেয়া এক চিঠিতে বিএফআইইউ সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থেকে সব ধরনের টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখতে বলেছে। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে পাহাড়সম সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সামনে এসেছে সামান্য সরকারি বেতন পেয়েও ভিনদেশে কীভাবে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ওই ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে অন্তত ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান। ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায়।
আল জাজিরা বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ ভালো সখ্যতা ছিল সাইফুজ্জামানের। ভিডিও প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ কথা তিনি নিজেই স্বীকার করে বলছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক… শেখ হাসিনা আমার বস… তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের দিকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্পত্তি ক্রয় করা বাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর এটি আরও বেড়ে যায়।
গেলো বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে সাংবাদিকসহ সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যায় আল জাজিরার অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়া দিয়ে হাতে তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামী দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন।
সাইফুজ্জামান আল জাজিরার কাছে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ছাড়াও তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এসি//