আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। সাম্য, দ্রোহ আর প্রেমের কবি। এক হাতে বাঁশের বাঁশরী, আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে ধুমকেতুর মতো বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব হয়, সঙ্গীতেও যুক্ত করেন ভিন্ন মাত্রা। বাঙালির আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চির বিদ্রোহী এ কবির ১২৪তম জন্মজয়ন্তী আজ। কবি বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে মাত্র ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর। তারপরও বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্ত বিস্তারি প্রভাব!
তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। তিনি ছিলেন বাংলা কবিতার একমাত্র বিদ্রোহী ও গানের বুলবুল। অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৫ মে) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত করে জাগিয়ে তুলেছিল ভারতবাসীকে। বিদ্রোহী কবিতে পরিণত হন তিনি।
১৯৪১ সালের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এ কবি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চলে লুম্বিনী পার্ক ও রাচি মেন্টাল হাসপাতালে। পরে ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে পাঠানো হয় তাকে। এই সময়ে একেবারেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফলে ১৯৫৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় নীরবে-নিভৃতেই কাটে তার জীবন।
১৯৭২ সালের ২৪ মে জন্মদিনে ঢাকায় এনে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবির ‘চল্ চল্ চল্- ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’কে সামরিক সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে সম্মানিতও করেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় এ কবিকে। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
‘দুখু মিয়া’ হিসেবেও পরিচিত এ কবি সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে লিখে গেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান। এছাড়াও তিনি ছিলেন চির প্রেমের কবি। প্রেম নিয়েছিলেন এবং দিয়েছিলেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হলেও প্রেমিক রূপ ছিল প্রবাদপ্রতিম। এ কারণেই অনায়াসে এ কবি বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ এছাড়াও একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ ও অভিনেতা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার, মতান্তরে ৭ হাজার গানসহ ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনীসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।