যশোরে বিএনপির সমাবেশে বাঁশের লাঠি মিছিল নিয়ে হাজির হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফলে সমাবেশ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনার। এসময় নেতাকর্মীদের দলীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি-সোঁটা বহন করতে দেখা গেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (২৭ মে) দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যশোর জেলা বিএনপি। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশের একদিন আগে মৌখিকভাবে শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে তাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এদিকে একই দিন শহরের টাউন হল মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
বিএনপির সমাবেশ প্রতিহতের হুমকি দিয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের এ হুমকি আমলে নিচ্ছে না বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি বাধা দিলেও বিএনপি এ সমাবেশ হতে পিছু হটবে না।
যশোরে বিএনপির সমাবেশ বেলা ২ টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। এসব নেতাকর্মীদের পতাকার সঙ্গে লাঠি-সোঁটা বহন করতে দেখা গেছে।
এসময় আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক বিভিন্ন স্লোগানও দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আড়াই-তিন হাত লম্বা বাঁশের ও বিভিন্ন ধরনের লাঠি-সোঁটার সঙ্গে দলীয় ও জাতীয় পতাকা বেঁধে মিছিলসহ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে শহরবাসীর মনে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সদরের চুড়ামনকাটি থেকে বাঁশের লাঠি নিয়ে সমাবেশে মিছিলসহকারে আসা নেতাকর্মীরা বলেন, কয়েকদিন যশোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও প্রতিহত করার জন্য বাঁশের লাঠি নিয়ে এসেছি। এক কর্মী জানান, 'আওয়ামী লীগের হামলা করলে তাদের গরম করে দিতে লাঠি নিয়ে এসেছি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, সমাবেশ করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে পুলিশ নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করেছে। এই গণগ্রেপ্তারের মধ্যেই আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় আমরা সমাবেশ স্থলের অনুমতি চাইলেও জেলা প্রশাসন প্রথমে অনুমতি দেয়নি। তবে পুলিশ সমাবেশের একদিন আগে মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। সমাবেশে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে অংশ নিচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে হুমকি দিচ্ছে। তবে কাউকে নতুন করে আটক করেনি পুলিশ। বাঁশের লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু নেতাকর্মী পতাকায় বাঁশের লাঠি নিয়ে এসেছিলো। পরে নিষেধ করলে তারা ফেলে দিয়েছে।
এদিকে যশোরে বিএনপির সমাবেশের আগের দিন গতকাল শুক্রবার বাঁশের লাঠি নিয়ে মহড়া দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলার আট উপজেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিকেলে শহরের টাউন হল ময়দানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটি।
আজ বিএনপির সমাবেশের একই সময়ে শহরের টাউন হল ময়দানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক ফেডারেশন সমাবেশ করছে। পাশাপাশি দুটি দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ জনগণ যদি প্রতিহত করে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। ২৭ মে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।’
যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসেন বলেন, ‘একই দিনে দুটি সমাবেশ হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই। কারণ, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার জন্য পুলিশ দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। কিছু বিএনপির নেতাকর্মী সমাবেশে লাঠি নিয়ে আসলেও তারা নিজেরা সেগুলো ফেলে দিয়েছে। সব ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে যশোরের প্রবেশদ্বারগুলোতে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তল্লাশি করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।