ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে এডিস মশাবাহিত এই রোগ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
গেলো সোমবার (২৯ মে) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মে মাস পর্যন্ত ১৭০৪ ডেঙ্গু রোগী আমরা পেয়েছি। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। যদি গত বছরের সঙ্গে তুলনা করি, এ বছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ। অর্থাৎ অনেক রোগী বেড়েছে।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপের অংশ হিসাবে হাসপাতাল পরিচালকদের সঙ্গে সভা করার পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জরিপের কাজ চলমান আছে। আমরা সার্ভে রিপোর্টটা দুই সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি। হাসপাতালে আলাদা কর্নার ও ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। চিকিৎসার বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কিভাবে ডেঙ্গু থেকে সচেতন থাকা যায় এবং কেউ আক্রান্ত হলে যাতে হাসপাতালে নেয়া যায়, সেসব কাজে সেনাবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। রোগী ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনের উন্নত সংস্করণ করা হয়েছে। চিকিৎসারও নতুন গাইডলাইন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭২ জন এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৮ জনই ভর্তি হয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে নতুন রোগী মিলেছে ১৪ জন। এ বছর সব মিলিয়ে ১৮৪৩ জন ডেঙ্গি নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২৩৫ জন ঢাকায় এবং বাকি ৬০৮ জন ঢাকার বাইরে। ডেঙ্গি নিয়ে যারা হাসপাতালে গেছেন, তাদের মধ্যে ১৮৪৩ জন এখনও চিকিৎসাধীন। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩ জন, যাদের ১০ জন ঢাকার। অবশ্য যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করাননি বা হাসপাতালে ভর্তি হননি, তাদের তথ্য এ পরিসংখ্যানে আসেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এবার ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। তবে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এই পরিসংখ্যানে না এনে আলাদাভাবে হিসাব করছে সরকার।
এ সপ্তাহ থেকে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ : সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে ফাইজারের টিকার ৩০ লাখ ডোজ পেয়েছে সরকার। এই সপ্তাহেই ফাইজারের নতুন ভ্যারিয়ান্টি কনটেইনিং ভ্যাকসিনে (ভিসিভি) তৃতীয় ও চতুর্থ বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হবে। এই টিকাটি নতুন উদ্ভাবিত টিকা এবং বিভিন্ন দেশে দেয়া হচ্ছে। বুস্টার ডোজ হিসাবে আমরা এই টিকাটি দেব।
বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবে, এমন প্রশ্নে জাহিদ মালেক বলেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি তারা তৃতীয় ডোজ পাবে। আর ক্রনিক রোগী যারা, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই, গর্ভবতী মায়েদের এবং সম্মুখ সারির যোদ্ধা যারা চতুর্থ ডোজ পায়নি, তাদেরকে টিকা দেয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে ট্রায়ালের কাজও শেষ করেছি, কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। সারা দেশে সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলার টিকাকেন্দ্রগুলোতে এই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায় ৩৬ কোটির অধিক টিকা দিতে পেরেছি। প্রথম ডোজ ৮৮ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় ডোজ ৪০ শতাংশ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা বেশ ভালো। গড়ে ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি। বিশ্বে এই হার ৭২ শতাংশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ইদানীং কিছুটা বাড়লেও মারাত্মক আকার ধারণ করার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।