সড়কে মৃত্যু কমছেই না। গেলো মে মাসে সারাদেশে সড়কপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ৫০০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৬৩১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৩৬ জন।
দেশের আকাশ-সড়ক-রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত রাখার লক্ষ্যে দেশের একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৬২টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ১৮৭ জন এবং নিহত হয়েছেন ৫০ জন; ১ হাজার ৪৯৬টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ৭৫২ এবং নিহত হয়েছেন ৬২ জন। একই সময়ে নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে, পরিবহন মালিকদের উদাসীনতা ও সতর্কতা অবলম্বন না করায় বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘণ্টা বাহন চালনাসহ বিভিন্ন নিয়ম না মানায় ১ হাজার ৬০৫টি বাস দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ৮৫৩ এবং নিহত হয়েছেন ২৬৩ জন।
এছাড়া দায়িত্বে অবহেলা, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নসিমন-করিমন এবং অন্যান্য তিন চাকার বিভিন্ন ধরনের বাহনে ১ হাজার ৩৩৭টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৪৪ এবং নিহত হয়েছেন ২৫৬ জন।
২২টি জাতীয় দৈনিক, ২০ টিভি চ্যানেল, ৮৮টি নিউজ পোর্টাল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সেভ দ্য রোডের স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সেভ দ্য রোডের এ প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ১ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দেশের নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২টি। এতে আহত ৯৭ জন এবং নিহত হয়েছেন ১১ জন। রেলপথে ৪১টি দুর্ঘটনায় আহত ৫৮ এবং নিহত হয়েছেন ২১ জন। আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রবাসীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক, নৌ ও রেলপথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে মালিক-শ্রমিক, প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। সংগঠনটি গত ১৪ বছর ধরে এ চার পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
সেভ দ্য রোডের ৭ দফায় রয়েছে-
১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে।
৩. সড়কপথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেসবিহীন যান নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া চালক-সহযোগী নিয়োগ ও হেলপার দ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশপথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে।
৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের আগ পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সব পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে।
৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যেন ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোনো প্রাণ না ঝরে।