আর্কাইভ থেকে ক্রিকেট

একজন এবাদতের গল্প

একজন এবাদতের গল্প

‘সকাল থেকেই আমাদের ভলিবল অঙ্গনে খুশির জোয়ার। বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে এবাদতকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও অভিনন্দন জানানো হচ্ছে’-বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আজ বিশেষ দিন। নিউজিল্যান্ড টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন দল। তাদেরকেই তাদের মাটিতে হারিয়ে ইতিহাস সৃর্ষ্টি করেছে বাংলাদেশ। এই ঐতিহাসিক জয়ের প্রধান নায়ক পেসার এবাদত হোসেন। অথচ তিনি একজন ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন।

জ্বি, ভুল পড়েন নি তিনি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক সময়কার ভলিবল খেলোয়াড় ক্রিকেটের বল হাতে জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতাতে। প্রথম দশ টেস্টে ১১ উইকেট নেওয়া এই পেসারের কাঁধে চড়ে ২১ বছরের আক্ষেপ মেটাবে বাংলাদেশ- এটা হয়তো কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছেন এবাদত হোসেন।  

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী গ্রামে জন্ম নেওয়া এই পেসারের বাবা চাকরি করতেন বিজিবিতে। বাবার দেখানো পথেই হাঁটলেন এবাদত। শৃঙ্খলিত জীবন গড়বেন বলে ২০১২ সালে যোগ দেন বিমানবাহিনীতে।

ছকে বাঁধা জীবনে চাকরির পাশাপাশি চলছিল খেলাধুলাও; ভলিবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি। বিমানবাহিনীর নিয়মিত ভলিবল খেলোয়াড় হয়ে যান। তবে ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেটও খেলতেন। জোরে বোলিং করতে পারতেন বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে খেলার ডাক আসতো।

বিমানবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর ক্রিকেট খেলার সুযোগ কমে যায়। তাই বলে বিমানবাহিনী তার ক্রিকেট খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মনের অন্তরালে বয়ে চলা ক্রিকেটের পোকাকে দূরে সরাতে পারেননি এই ভালোলাগায় সহযোগীতা করে তার প্রতিষ্ঠান বিমানবাহিনীও।

ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেওয়ায় ২২ গজে ঘাম ঝরাতে শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পান এবাদত। এরপর ক্রিকেটে পরিচিত হতে থাকেন ধীরে ধীরে।

দুই বছর পর পেয়ে যান সূবর্ণ সুযোগ। ২০১৬ সালে রবি পেসার হান্টের শেষ রাউন্ডে ১৩৯.০৯ কিলোমিটার গতিতে বল করে সবাইকে চমকে দেন এবাদত। বিসিবির এইচপি ক্যাম্পে সুযোগ পান। তারপর নিউজিল্যান্ড সফরে যান ডেভলপমেন্ট স্কোয়াডের অংশ হয়ে।

তখন পর্যন্ত জোরে বোলিংয়ের স্কিল নিয়েই ঘোরের মাঝে ছিলেন এবাদত। ওই সফরেই চোখ খুলে যায় তার। দেশে ফিরে বোলিং নিয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। অ্যাকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। এবাদতের আগের দিনের স্পেলেই বাংলাদেশের জয়ের সুবাস পাচ্ছিল। আজ বুধবার তার বোলিং জয় ত্বরান্বিত করে। সেই এবাদতের পেশাদার ক্রীড়াবিদ হিসেবে পথচলা শুরু হয়েছিল ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে।

এবাদতের পারফরম্যান্সে পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গন গর্বিত। ভলিবল অঙ্গনের ভালোলাগা একটু বেশি। ভলিবলের তারকা ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির বলেন, ‘একজন সাবেক ভলিবল খেলোয়াড় দেশকে এত বড় অর্জন এনে দিল। এটা আমাদের ভলিবলের জন্যও গৌরব।’

এবাদতের সঙ্গে ভলিবল খেলার স্মৃতিচারণ করলেন জাবির, ‘বিমানবাহিনীর হয়ে এবাদত খেলেছে। ও আমার এক ব্যাচ জুনিয়র হলেও সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। ভলিবলে বেশ ভালো খেলোয়াড় ছিলো সে। ’

এবাদতের ভলিবল থেকে ক্রিকেটে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে বড় হিসেবে দেখছেন জাবির, ‘সে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজের ইচ্ছে ও সক্ষমতার দারুণ সম্মিলন ঘটিয়েছে সে।’

হাসিব মোহাম্মদ

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন একজন | এবাদতের | গল্প