উত্তরের জেলাটাকে যেন সাদা চাদরে ঢেকে ফেলেছে কুয়াশা। ভোরের আলো উঠতে না উঠতেই কুড়িগ্রামের আকাশজুড়ে শুধু ধোঁয়াটে সাদা রং—আর সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়ার কামড়। ডিসেম্বরের শুরুর এই সকালগুলো যেন শীতের নিঃশব্দ দখলদারির গল্প লিখছে।
শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে—যা স্থানীয়দের কাছে এখন শীতের প্রথম বড় আঘাত।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুঃসময় নেমে এসেছে জেলার প্রান্তিক মানুষের জীবনে। দিনমজুর, নদীপাড়ের পরিবার, ছিন্নমূল মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
নাগেশ্বরী এলাকায় অটোচালকদের অনেকেই জানাচ্ছেন—মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। হেডলাইট জ্বালিয়েও গাড়ি চালাতে হচ্ছে ধীরগতিতে। কুয়াশা ও ঠান্ডায় যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও চোখে পড়ার মতো কমেছে।
কৃষক সমাজের কষ্টও বাড়ছে সমানতালে। স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্য—এই ঘন কুয়াশা ফসলের জন্য সুখবর নয়। বিশেষ করে চারা ধানের বৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে। মাঠে কাজও পিছিয়ে পড়ছে দিনের পর দিন।
শীতের হঠাৎ তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ—গ্রামে গ্রামে সর্দি-জ্বর বাড়ছে, অনেকেই শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভোরের ঠান্ডা বাতাস যেন তাদের জীবনযাত্রায় নতুন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শীতের এই বাড়তি দাপটে প্রাণ ফিরে পেয়েছে জেলার বাজারগুলো। কুয়াশায় ঢেকে থাকা রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন সতর্কভাবে এগোলেও—শহরের সুপার মার্কেট, নছর উদ্দিন মার্কেটসহ বড় বিপণীগুলোতে ভিড় জমছে ক্রেতাদের। কেউ খুঁজছেন নতুন সোয়েটার, কেউ আবার মোটা জ্যাকেট। তিন দিন ধরে তাপমাত্রা কমতে থাকায় গরম কাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে। তবে স্বস্তির জায়গা নেই নিম্নবিত্তের জীবনে—তাদের ঠাঁই পুরোনো কাপড়ের দোকানে, কম দামে শীত নিবারণের শেষ ভরসা সেখানে।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, এ জেলার তাপমাত্রা আরও কমবে। বর্তমানে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৪ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে—এমন সতর্কতাও দিয়েছেন তিনি।
এসি//