আর্কাইভ থেকে অর্থনীতি

জুলাই থেকে ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন

জুলাই থেকে ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মার্কিন ডলার হচ্ছে অন্যতম প্রধান মুদ্রা। ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এতদিন ডলারেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করে আসছে। ব্যতিক্রমের মধ্যে যেমন চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেন। ভারত অবশ্য ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করেছে আগেই। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু করতে যাচ্ছে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হওয়ার কার্যক্রম জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধন হতে পারে। ঢাকা ও নয়াদিল্লি উভয় জায়গা থেকে আলাদা করে উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে দুই দেশের। আপাতত বাণিজ্য হবে শুধু ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে। তবে মার্কিন ডলারে বাণিজ্য হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকছে আগের মতোই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কার্যক্রমটি উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ ১১ জুলাই। ভারতের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলাপ চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার বা অন্যকোনো মুদ্রা এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনা করে, আর্থিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা’। এ ব্যবস্থায় অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করতে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংককে ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকে সম্প্রতি হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ হিসাবের নাম নস্ট্র হিসাব। নস্ট্র হিসাব খোলা নিয়ে চার ব্যাংকের মধ্যে চিঠি চালাচালি এখনও চলছে বলে জানা গেছে। এক দেশের এক ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশে হিসাব খুললে সে হিসাবকে নস্ট্র হিসাব বলা হয়ে থাকে। একইভাবে বিদেশের কোনো ব্যাংক যদি বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে একই উদ্দেশে হিসাব খুলে থাকে, তাকে বলা হয় ভস্ট্র হিসাব। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ইতিমধ্যে ইস্টার্ণ ব্যাংককে নস্ট্র হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছে। একই হিসাব খুলতে সোনালী ব্যাংক আরবিআইয়ের অনুমতি পেতে পারে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। আপাতত ভস্ট্র হিসাব খোলার দিকটি বিবেচনায় থাকছে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়। রুপির পাশাপাশি বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাও যখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হবে, তখন ভস্ট্র হিসাব খোলার বিষয়টি আসবে। জানা গেছে, কার্যক্রমটি ঢাকায় উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের পাশাপাশি এসবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সি এস শেট্টিও জুম প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারেন। ভারতের দিক থেকেও আলাদা করে এ কার্যক্রম উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৮ হাজার ৯১৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্যই আমদানি হয় ভারত থেকে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করে ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় ওই অর্থবছরে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের একই প্রবণতা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জুলাই | ভারতের | সঙ্গে | রুপিতে | লেনদেন