ঈদুল আযহায় গরু, খাশি, উট, দুম্বা ইত্যাদি পশু কোরবানি করা হয়। তাই এই সময়টাতে রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়া হয় বিরামহীন ভাবে। পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বেলাই খাওয়া হয় মাংস। আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে গেলেও থাকে মাংসের সম্ভার।
পশুর মাংস বা রেড মিট অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। এসব মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন এবং মিনারেলস। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হাড়, দাঁত ও মাংসপেশীকে সুগঠিত করে ও রক্তস্বল্পতা দূর করে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে কোরবানির সময় অতিরিক্ত মাংস খেলে ঘটতে পারে বিপদ। পশুর মাংসে অনেক বেশি পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে,যার কারণে অনেক ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে হজমে সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
এছাড়াও অতিরিক্ত পশুর মাংস খেলে রক্তনালিতে চর্বির পরিমান বেড়ে যায়। এতে রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্থ হয়ে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ,স্ট্রোক, পিত্তথলিতে পাথর বা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই কোরবানির মাংস খাওয়ার সময় থাকতে হবে সতর্ক। কিছু নিয়ম মেনে চললে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
এ সময় মাংস খাওয়ার উচ্ছ্বাসে সুষম খাবারের কথা ভুলে গেলে চলবে না। শারীরিক পরিস্থিতি, বয়স এবং স্বাস্থ্য বুঝে পরিমিত হারে মাংস খেতে হবে। চেষ্টা করতে হবে তিন বেলা মাংস না খাওয়ার। বিশেষ করে রাতে এড়িয়ে চলাই ভাল।
কোরবানির মাংস বাড়িতে আসার সাথে সাথে ভালভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে। রান্নার আগেই মাংসের চর্বি কেটে আলাদা করতে হবে। এছাড়া মাংসের ভেতরে যে চর্বি আছে সেটা গলাতে গরম পানিতে মাংস সেদ্ধ করে নিতে পারেন।
মাংসের ছোট ছোট করে টুকরো করে টক দই, লেবুর রস, সিরকা, পেঁপে বাটা দিয়ে মেখে রাখলে একদিকে যেমন কম সময়ে মাংস সেদ্ধ হয়, তেমনি চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কাটানো যায়।
মাংস অল্প তেলে রান্না করতে হবে। রান্নার কাজে ঘি বা বাটার অয়েল ব্যবহার না করে অলিভ অয়েল করা সবচেয়ে ভাল।
মাংস উচ্চতাপে ভালভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভাল আগুনে ঝলসে খেতে পারলে। এতে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেনা।
প্রতি বেলায় মাংসের পাশাপাশি যথেষ্ট সবজি অথবা সালাদ রাখতে হবে। কেননা সবজিতে থাকা ফাইবার মাংসের চর্বি হজমে সাহায্য করে। এছাড়া সবজি থাকার কারণে মাংস খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমানো যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
মাংসের মগজ, কলিজা সেইসঙ্গে ঝোল বা স্টকে সবচেয়ে বেশি চর্বি থাকে, তাই খাওয়ার সময় সেগুলো পরিমিত খাওয়াই ভাল।