আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

নার্স দিয়ে অস্ত্রপচার, কেটে গেল নবজাতকের মাথা

নার্স দিয়ে অস্ত্রপচার, কেটে গেল নবজাতকের মাথা

ফরিদপুর শহরের পশ্চিস খাবাসপুর মহল্লায় ঘটেছে এক লোমহর্ষক ঘটনা। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নন-ডিপ্লোমা নার্স দিয়ে এক গর্ভবতী নারীর অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে। এসময় নবজাতকের মাথার বাঁ পাশের কিছু অংশ কেটে যায় এবং সেলাই লাগে নয়টি। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছেন।

আজ শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার মইজউদ্দিন মন্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী শফি খানের (৩২) স্ত্রী রুপা বেগম (২৮)। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এই দম্পতির বিয়ে হয়। এটিই তাদের প্রথম সন্তান।

নবজাতকের মাথা কেটে যাওয়ার ঘটনায় হাসপাতালের দুই পরিচালকসহ অভিযুক্ত নার্সকে আটক করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন দুই পরিচালক পলাশ মোল্লা (৪৫) ও আল হেলাল (৪১) এবং নার্স চায়না বেগম (৩৬)।

রুপা বেগমের স্বামী শফি খান জানান, তার স্ত্রী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শনিবার সকালে তার স্ত্রীর প্রসববেদনা উঠলে রাজবাড়ীর উজানচরের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু ওই হাসপাতালের বিপরীত পাশে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কয়েকজন স্টাফ তাদের দ্রুত চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে সেখানে নিয়ে যান। তারপর চিকিৎসকের কথা বলে নন-ডিপ্লেমা নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে তার বাচ্চার মাথার কিছু অংশ কেটে ফেলেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন শফি খান।

গৃহবধূর ভাতিজা মোস্তফা আমীর ফয়সাল (২৭) এ ঘটনায় ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি এই চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় হাসপাতালকে বহন করা ও কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন। এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করবেন বলে জানান।

ফয়সাল বলেন, ডাক্তার নুসরাত জাহান এই অস্ত্রোপচার করবেন বলে তাদের জানানো হয়। যিনি ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে ২০১৮ সালে এমবিবিএস পাস করেছেন। পরে তারা জানতে পারেন ওই চিকিৎসকের পরিবর্তে অস্ত্রোপচার করেন একজন অনভিজ্ঞ নার্স। যার কারনে এই ঘটে দূর্ঘটনা।

রুপা বেগমের ননদ হোসনে আরা বেগম বলেন, আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে তার ভাবিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা নবজাতকের চিৎকার শুনে দেখতে চাইলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। তারা জোর করে ওই কক্ষে প্রবেশ করে দেখেন নবজাতকের মাথার কিছু অংশ কেটে অত্যধিক রক্তপাত হচ্ছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বলেন, অপারেশনে জটিলতা দেখা দিয়েছিল বলে এ ঘটনা ঘটেছে। এটি তেমন গুরুতর কোনো বিষয় নয়। এরপর তাদেরকে বিষয়টি চেপে যেতে বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে রুপা বেগমের পরিবার এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনকে অবগত করেন। বর্তমানে মা ও শিশু উভয়ই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে।

এ ঘটনায় ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, তিনি আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালের দুই পরিচালক ও অভিযুক্ত নার্সকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর বিধানসমূহ লঙ্ঘন করায় আজ বেলা ২টা থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নার্স | দিয়ে | অস্ত্রপচার | কেটে | নবজাতকের | মাথা