ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে গুলশান এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যেকটি চেকপোস্ট ও প্রবেশপথে তল্লাশি ছাড়াও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ও মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধে চেকপোস্টগুলোতে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ।
শনিবার (১৫ জুলাই) এসব এলাকায় মধ্যরাত ১২টা থেকে আগামী ১৮ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর বাইরেও ১৬ জুলাই মধ্যরাত ১২টা থেকে ১৭ জুলাই মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার ও ইজিবাইক। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ সংসদীয় আসনে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ডসহ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৭২ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কমিশন।
ইসির তথ্যানুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং ১৫, ১৮, ১৯, ২০ এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন গঠিত। এ উপনির্বাচনের সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পাহারায় ২১ জনের পুলিশ-আনসারের সমন্বয়ে ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। তারা দায়িত্ব পালন করবে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। তবে অঙ্গীভূত আনসার পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৫টি, র্যাবের ৬টি টিম ও ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ২৫ জন নির্বাহী ও ৫ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৬২৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০ জন। ১২৪টি কেন্দ্রের ৬০৫টি কক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে। এ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরাসরি মনিটরিং করবে ইসি।
সরেজমিনে গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুলশান-১ ও গুলশান-২ এলাকায় প্রবেশপথে কাকলি, বনানী, গুলশান-১ গুলশান-২, বাড্ডা লিঙ্ক রোড, নতুন বাজার ও কালাচাঁদপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বহিরাগতদের প্রবেশ ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্ত্বেও অনেক যানবাহন ও বহিরাগতদের গুলশানে প্রবেশের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তবে প্রত্যেকটি চেকপোস্টে তাদের আটকে দিচ্ছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা পরিপালনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে গুলশান ট্রাফিক বিভাগ।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি চেকপোস্টে ক্রাইম ডিভিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে তল্লাশি পরিচালনা করছে ট্রাফিক সদস্য। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বহিরাগতসহ যানবাহনকে গুলশানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গুলশান-২ ঢোকার মুখে চেকপোস্টে যানবাহনের চালকরা অনুরোধ করে ট্রাফিক সদস্যদের জানান, চাকরির কারণেই তারা এ এলাকায় এসেছেন। আজ এখানে নির্বাচন তা অনেকেই জানেন না। পুলিশের বাধায় বাধ্য হয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন। কোনো কোনো যানবাহনকে ফিরে যেতে বাধ্য করছে পুলিশ। এছাড়া অনেক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে।
রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য হবে। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।