আর্কাইভ থেকে অর্থনীতি

রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় অমানবিক ও অন্যায়: ক্যাব

রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় অমানবিক ও অন্যায়: ক্যাব
সেন্ট্রাল হসপিটালে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই নারী চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে চিকিৎসকদের সব ধরনের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সেইসঙ্গে রোগীদের জিম্মি করে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ এসব কথা বলেন ক্যাব নেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়, দুজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের কারণে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এ ধরনের অমানবিক ও অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এতে বলা হয়, চিকিৎসক হোক আর যেই হোক সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনিভাবে মোকাবিলা করা উচিত। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হীন ষড়যন্ত্রে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া জনগণের চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক অধিকার খর্ব করার শামিল। যা জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করার হীন প্রয়াস শুধু নয়, এটা চরম বর্বরতার শামিল এবং আদিম যুগের ‘জোর যার মল্লুক তার’ স্লোগানে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান। এটা অনেকটা লাশের রাজনীতির মতো। চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা বাতিল করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতের কাছে প্রতিকার চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অবৈধ ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানান ক্যাব নেতারা। তারা সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধের ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করেন এবং রোগীদের জিম্মি করে এ ধরনের নৈরাজ্যের পরিস্থিতি পরিহার করার আহ্বান জানান। গুটি কয়েক অসাধু লোকের কারণে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধের একযোগে অঘোষিত ধর্মঘট চিকিৎসকদের মহান পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং চিকিৎসকরা আইনের ঊর্ধ্বে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে মতপ্রকাশ করে এ ধরনের আত্মঘাতী কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় ক্যাব। ক্যাব নেতারা আরও বলেন, চিকিৎসা পেশা একটি মহান সেবাধর্মী পেশা হলেও বর্তমানে সনদবিহীন, ভুয়া, অসাধু চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকরা এ মহান পেশাকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে কোটিপতি হওয়ার বাসনায় লিপ্ত। সে কারণে রোগীর সেবা, মানবতার সেবার চেয়ে অর্থই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও সুযোগ-সুবিধা থাকলেও রোগীরা সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক ও চেম্বারে যেতে পরামর্শ প্রদান করা হয়। আর যেকোনো মানুষ রোগাক্রান্ত হলেই আগে পরামর্শ দেয়া হয় প্যাথলজিক্যাল টেস্ট ও অপারেশন। কারণ এতে চিকিৎকদের লাভ বেশি। যার কারণে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো শহর, গ্রাম সর্বত্র ছাড়িয়ে পড়েছে। আর ক্লিনিকগুলো নামমাত্র সেবা দিয়ে গলাকাটা বিল আদায় করছে। বিএমএ-সহ সরকার ও বিরোধী দল সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য, একচেটিয়া প্রভাবের কারণে এখানে রোগীদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো প্রকার নজরদারি করার সাহস পর্যন্ত নেই। ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে চিকিৎসার জন্য ভিড় জমান। তারা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেক্টরে এ ধরনের নৈরাজ্যের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সব প্রতিষ্ঠানে কঠোর নজরদারির দাবি জানান। স্বাস্থ্য সেক্টরে কমিশন প্রথা, উপহার প্রথা বাতিলসহ ভোক্তা স্বার্থরক্ষায় কঠোর আইনি প্রতিকার এবং সিবিএ সংগঠনের মতো বিএমএর অযাচিত হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রোগীদের | জিম্মি | করে | দাবি | আদায় | অমানবিক | ও | অন্যায় | ক্যাব