রাজধানীর শাহজাহানপুর গুলবাগে যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এর মধ্যে ডিবি পুলিশ আট জনকে ও র্যাব-৩ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার (২২ জুলাই) পৃথক অভিযানে রাজধানী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (২৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে দুজন গ্রেপ্তারের বিষয় জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
ডিবির হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হাবিব আহসান, মো. আলিফ হোসাইন, মো. রবিউল সানি, মো. মেহেদী হাসান, মো. শাহজালাল, মো. রফিকুল ইসলাম, নুর আলম ও মো. সুমন মীর। অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার এলাকা আদনান আসিফ ও মো. শাকিলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী তানজিনা দেওয়ান বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।
র্যাব বলছে, হত্যার শিকার অলিউল্লাহ রুবেল রাজধানীর শাহজাহানপুরে পরিবারের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শান্তিবাগ এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি ওই এলাকায় পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন যুবলীগ নেতা রুবেল। স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে শাহজালাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার শত্রুতার তৈরি হয়। এরপর তাকে ‘শিক্ষা’ দিতেই এ হামলা চালানো হয় এবং হত্যা করা হয়।
এছাড়া একই ঘটনায় আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আট জনকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ভিকটিম রুবেলের সঙ্গে নিবির ও শাহজালাল নামে দুজনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে নিবির এবং শাহজালাল দুজন মিলে রুবেলকে হত্যা করতে আসামি হাবিব আহসানের সঙ্গে চুক্তি করে। তারই ধারাবাহিকতায় নিবির প্রথমে চাপাতি কেনার হাবিবকে ৪ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে হাবিব খিলগাঁও বাজার থেকে দুটি চাপাতি কেনে। ঘটনার আগেরদিন শাহজালাল ও হাবিব দুজনে মিলে রুবেলকে হত্যার পরিকল্পনাও সাজিয়ে নেয়।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন অনন নামে এক যুবক ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে অলিউল্লাহ রুবেলের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। আর হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। মেহেদী হাসান ও সানি নামের দুজন দুই পাশে পাহাড়ায় থাকে। রুবেল রিকশাযোগে বাসার দিকে রওনা দিলে অনন মোটরসাইকেলে গিয়ে হাবিবকে খবর দেয়। এসময় হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকে। কাছাকাছি আসার পর হাবিব এবং আলিফ চাপাতি নিয়ে এগিয়ে আসে। তা দেখে রুবেল দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এসময় পেছন থেকে হাবিব ও আলিফ তাকে ধাওয়া করে।
এক পর্যায়ে আলিফ রুবেলের মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপ দিলে সে মাটিতে পড়ে যায় বলে জানান হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘হাবিব ও আলিফ চাপাতি দিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চার জন একসঙ্গে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় চাপাতি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যায়।‘
পরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।