রাজশাহীর বাঘায় নাজমুল হোসেন (২৮) হত্যা মামলায় ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বেকসুর খালাস পেয়েছেন ১৫ জন। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মিন্টু আলী (৩৫), মো. রানা (২১), মো. পানা (২৫), আরিফ হোসেন (২৫) ও শরিফ হোসেন (২২) এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার মনিহারপুর গ্রামের আরজেদ আলী ওরফে ভোলা (৪৭)। আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছেন। জরিমানার অর্থ না দিলে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিদের।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলন ২৩ জন। পুলিশ তদন্তে করে আরও চারজনকে শনাক্ত করে। পরে ২৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুরিশ। এরমধ্যে প্রধান আসামি মো. সুমনসহ চারজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাই তাদের বিচার চলছে শিশু আদালতে। অন্য ২৩ জনের বিচার শেষ হলো রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আরজেদ আলীর ছেলে সুমন এলাকার নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করত। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সুমন সেনা সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেলে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর চাকরিতে প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি সে তার বন্ধুদের নিয়ে ওই ছাত্রীর পথ আটকে আবার প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
এ ঘটনায় ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানায়। ছাত্রীর নানা আজিজুল রহমান সুমনের বাবা-মায়ের কাছে বিচার দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সুমন। সেদিন বিকালে পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার সুলতানপুর মোড়ে আজিজুলের ছেলে নাজমুল হোসেন ও আজিজুলের নাতি তারিকুল ইসলাম তুষারকে পেয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে সুমনসহ অন্য আসামিরা। পরে নাজমুলকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে বাঘা থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা আজিজুল।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু আরো জানান, রায় ঘোষণার সময় ২৩ জন আসামিই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। সাজাপ্রাপ্ত ছয়জনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ। নিহত নাজমুলের চাচা আবু তালেব বলেন, প্রকাশ্যে নাজমুলকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছেন আসামিরা। কিন্তু রায়ে অনেকেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাঁরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।