আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ছেলেদের সঙ্গে চোখাচোখি হলেই বুক দুরুদুরু: ঋতুপর্ণা

ছেলেদের সঙ্গে চোখাচোখি হলেই বুক দুরুদুরু: ঋতুপর্ণা

মহড়া দিলেন কিন্তু অনুষ্ঠান করতে পারলেন না! কারন মা’র সঙ্গে মাসির বাড়ির সরস্বতী পূজায় গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারেননি। সেবার মন খারাপ হয়েছিল ভীষণ। ছোটবেলার এক সরস্বতী পূজার স্মৃতিচারণের সময় এমনটাই বললেন টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

ছোটবেলার দিকে তাকালে ঋতুপর্ণার সবচাইতে প্রিয় উৎসব মনে হয় সরস্বতী পুজাকে। সেই সব সরস্বতী পুজা মানেই অনেক স্মৃতি, অনেক ভালবাসার অভিজ্ঞতা। পুজা বা উৎসব যেন জীবনেরই নানারকম সংস্কৃতির কথা বলে।

সরস্বতী পুজা মানেই তো বাসন্তী রঙের শাড়ি। ছোটবেলাকে ফিরে দেখলে ঋতুপর্ণার মনে হয় সেকাল ছিল বাসন্তী রঙের! অনৈক মনে পরে তাঁর। সরস্বতী পুজায় সেই অল্প বয়সে কী উত্তেজনা! উপোস করতে হবে। তাড়াতাড়ি স্নান করে নিতে হবে। অঞ্জলি দিতে হবে। সরস্বতীর পায়ের কাছে পড়ার বই, কলম এসব রাখতে হবে। কেমন একটা আনন্দময় ব্যস্ততা!

ঋতুপর্ণার স্মৃতিতে ধরা দেয় পূজার পর্বে পর্বে আনন্দের কথা! দুপুরে লুচি, বেগুন ভাজা, খিচুড়ি। সব বন্ধুরা মিলে বিকেলে দলবেঁধে প্রসাদ খেতে যেতেন অন্যদের বাড়ি। সেদিন নিজেদের খুব ফুরফুরে আর স্বাধীন লাগত এ অভিনেত্রীর।

ঋতুপর্ণাদের পাড়ায় একটা কমিউনিটি ছিল, সেখানে বড় আয়োজনে সরস্বতী পুজা হত। সেই পুজার বিশেষ আকর্ষণ ছিল সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাড়ার প্রত্যেকে তাঁরা অপেক্ষা করতেন সরস্বতী পুজা কবে আসবে। এক মাস আগে থেকে মহড়া চলত। কেউ গান, কেউ নাচ, কেউ নাটকের দলে যোগ দিতেন। ঋতুপর্ণা সেই পূজার অনুষ্ঠানে নাচতেন। একবার মাসির বাড়ির পুজায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মা। কী কারণে কিছুতেই সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ঋতুর মন খারাপ হয়েছিল ভীষণ! মহড়া দিলেন কিন্তু অনুষ্ঠান করতে পারলেন না। অল্প বয়সের সেই মন খারাপটা এত গভীর ছিল যে, আজও সেই কথা মনে আছে তাঁর।

ঋতুর ভাষায়, এর পর আরেকটু বড় হলে সরস্বতী পুজোর আনন্দে যুক্ত হল নতুন উত্তেজনা। অঞ্জলি দেওয়ার সময় অন্য পাড়ার ছেলেরা আসত। তখন তাদের সঙ্গে চোখাচোখি হত। বুক দুরুদুরু করত তাতেই। একটু ভয় আর অজানা আনন্দ মিলেমিশে রোমাঞ্চ হত। ছেলেদের ছোট ছোট চিরকুট নিয়েও নানা উত্তেজনায় কাটাতেন বান্ধবীরা। এরমধ্যে লুকিয়ে কেউ যদি কাউকে বলত, 'তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়িটায়' বা 'খুব সুন্দর লাগছে তোমার চুলের ফুলটা'- তাহলে তো হয়েই গেল! আসলে ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার এই সময়টার অপরূপ সৌন্দর্য আছে। তখন অন্য সকলের মতন ওই সময়টার রোমাঞ্চ গ্রহণ করে তিনিও বড় হয়েছেন।

ঋতুপর্ণা বলেন, ছোটবেলার সময়টা নিয়ে ভাবলে মনে হয় যে ওই সময়ে মানুষের জীবনে ভালবাসার অঙ্কুরোদগম হয়। বৃহৎ জীবনে প্রবেশের আগে এই ভালবাসার অঙ্কুরোদগম। তাই ছোটবেলার সময়টাকে তিনি কখনওই ভুলতে পারবেন না। হয়তো কেউই পারে না!

বড় হওয়ার পরেও সরস্বতী পুজা ঋতুপর্ণার জীবনে এক‌ই রকম ভালবাসার জায়গায় আছে। কারণ তাঁদের শিল্পী জীবনে সরস্বতী ঠাকুর একটা বড় প্রেরণা। আঁকার স্কুলে ঠাকুরকে পেয়েছেন ঋতুপর্ণা। তারপর যখন সিনেমার জগতে এলেন, সঙ্গে থেকেছেন তাঁর ঠাকুর। 'মুক্তধারা' সিনেমায় সরস্বতী ঠাকুরের বেশে ঋতুর একটা সুন্দর দৃশ্য ছিল। সেই ছবিটা এখনও অনেকে তাদের কাছে রেখে দেয়।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মনে করেন, সরস্বতী পুজা জীবনেরই একটি অংশ। সরস্বতী দেবী প্রত্যেকের ভেতরের মানুষটাকে বিশুদ্ধ স্বর দেন, শুভ্র পবিত্রতা দেন। প্রতিটি মানুষকে এই দান লালন করতে হবে সারা জীবন।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ছেলেদের | সঙ্গে | চোখাচোখি | হলেই | বুক | দুরুদুরু | ঋতুপর্ণা