সকালে ফোন করলাম মায়ের কাছে।প্রথম হ্যালোতে মা বল্লো বাবা কিছু খেয়েছিস?বাসায় চাউল ডাল কিছু আছে? মায়ের এই রকম প্রশ্নের জন্য কোনদিন প্রস্তুত ছিলামনা।যেখানে আমিই জিজ্ঞেস করার কথা ছিল মা তুমি কেমন আছো? বাড়ীর সবাই কি ভাল আছেন?তোমার শরীরটা কি ভাল ?বাড়ীতে বাজার সওদা কি সব ঠিকমত আছে?আজ প্রায় দেড় মাষ বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা বাসা থেকে ঠিক মত বের হতে পারিনা।কারণ সারা দেশ লকডাউন।সামান্য কিছু গ্রোসারী দোকান সীমিত ভাবে খোলা তাও আবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত।মানুষের হাতে নাই তেমন টাকা পয়সা।যার যা আছে তা দিয়ে কেউ ডাল কিনেছে,কেউ শুকনো মুড়ি কিংবা চাল। কর্মহীন মানুষ যে কতই কষ্টে আছে শুধু প্রবাসে যারা আছে তারাই অনুভব করতে পারে।
বাজারে নিত্যপন্য জিনিসের স্বাভাবিক জোগান থাকলেও অনেকের সেই সাধ্য নাই সব জিনিস কিনে খাওয়ার মত।আজকে দেড় মাস যাবত নাই কোন কাজ, নাই পকেটে উদ্ধৃত্য টাকা।কোম্পানির বেতন নাই,ব্যবসায়ীর নাই ব্যবসা।আমার জানা মতে শতকরা ৭০% থেকে ৯০%প্রবাসী তাদের বাড়ীতে বিদেশ থেকে টাকা পাটাইলেই তাদের বাড়ীতে বাজার সওদা কিনতে পারেন।প্রবাসী পরিবারে বড়ই হাহাকার।দেশে একান্ত গরিবরা মানুষের সহানুভুতিতে কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা পেলেও প্রবাসী পরিবারগুলো মধ্যবিত্য ও নিন্ম-মধ্যবিত্য হওয়ার কারণে কারো কাছে পারেনা সাহায্য চাইতে বা ভিক্ষা করিতে।আত্ব-মর্যাদার কথা চিন্তা করিলে প্রবাসী পরিবার গুলোই সব চেয়ে বেশী সমস্যায় আছেন। বর্তমানে দেশে সরকারীভাবে কিংবা বেসরকারী ভাবে যৎসামান্য সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে তা আবার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের ভয়ে অনেক প্রবাসী পরিবার সাহায্য-সহযোগিতা নিতে পারছেনা ।
করোনাভাইরাসের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্য পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণায় দেশের সিংহ ভাগ অর্থনৈতির যোগানদাতা প্রবাসীদের সহযোগিতা বিষয়ে কোন কথা উল্লেখ না থাকায় আশাহত হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি।
যেখানে প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। সেই পরিবারগুলো কিভাবে চলবে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি হারানো বাংলাদেশিদের সহযোগিতার বিষয়ে সরকারী কোনো দিক নির্দেশনা না থাকায় প্রবাসীরা হতাশা গ্রস্ত। প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ দাবি অনতিবিলম্বে প্রবাসীদের সহযোগিতায় অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা দরকার, প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রবাসীদের তালিকা তৈরি করে এসব পরিবারের হাতে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছে দিয়ে প্রবাসী পরিবার গুলোকে বাঁচানো একান্ত জরুরী।এ সময় যদি প্রবাসীদের সহযোগিতা করা না হয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রেমিটেন্সের বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রপ্তানি আয়ের ঘাটতি মেটানোর যে স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের মাননীয় অর্থমন্ত্রী তা বুমেরাং হতে পারে ।
বিশ্বময় মহামারী আকার ধারণ করা কারোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। প্রতিটি দেশই হু হু করে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ১৫০জনের অধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ করা না গেলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে এর সংখ্যা হবে কয়েক হাজার। করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নআয়ের প্রবাসী বাংলাদেশিরা।যাদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রবাসী কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এসব প্রবাসীরা দিনরাত পরিশ্রম করে অর্জিত আয়ের শতভাগ টাকা রেমিটেন্স এর মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে আসলেও ভাইরাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশে প্রায় সব কাজ-কর্ম বন্ধ।
প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশী আতঙ্কিত এই কারনে যে রাত্রে স্বাভাবিক ভাবে ঘুমিয়েছেন সকালে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুবরন।অন্যদিকে করোনার ভয়। গত কয়েকদিনে সৌদি আরবে প্রায় ৮/১০জন প্রবাসী বাংলাদেশী ঘুমের মধ্যে ষ্টোক করে মৃত্যুবরন করেছেন। প্রায় ৫/৬জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন।আমার জানামতে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবের মদিনাতেই ৩০/৩৫জন প্রবাসী বাংলাদেশী সর্দি,কাশি ও শ্বাস কষ্ট নিয়ে মদিনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা রকম ষ্ট্যাটাস দিয়ে আপন জন,বন্ধু বান্ধবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেছেন।হয়তো দেশের আত্বীয় স্বজন কিংবা আপনজনদের সাথে আর দেখা নাও হতে পারে।যে কোন সময় হয়ে যেতে পারে অনাকাংকিত মৃত্যু।
পরিশেষে বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে একান্ত দাবী হলো জাতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসীদের বাচানোর জন্য,প্রবাসীদের পরিবার বাঁচানোর জন্য সরকারীভাবে অন্তত ৫ হাজার কোঠি টাকার একটি প্রনোদনা প্রকল্প ঘোষনা করে প্রতিটি প্রবাসীদের মাঝে বন্টন করা হউক।প্রবাসী বাঁচলে অর্থনীতি বাচবে।অর্থনীতি মজবুত হলে দেশ বাঁচবে।