আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাংলাদেশেই মায়ের কাছে থাকবে জাপানি দুই শিশু

বাংলাদেশেই মায়ের কাছে থাকবে জাপানি দুই শিশু

দুই মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে জাপানি নাগরিক ডা. মা এরিকো নাকানোর আপিলের রায় হয়েছে আজ। আদেশে বলা হয়েছে, দুই মেয়ে জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা তাদের মায়ের সঙ্গে থাকবে। আপিল বিভাগ একই সঙ্গে জাপানি মা সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারবেন না বলেও আদেশ দিয়েছে। মায়ের কাছে থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বাবা ইমরান শরীফ সুবিধাজনক সময়ে মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুই সন্তানের জিম্মা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই কন্যার জিম্মার বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক আদালতে করা মামলা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। 

আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

আর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফিদা এম কামাল, আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনীক আর হক। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশেই শিশুরা তাদের মায়ের কাছে থাকবে। তাদের নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা এরিকো নাকানোর লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) উপর ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ বিষয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য ঠিক করেন আদালত। তার ধারাবাহিকতায় আজ এ আদেশ দেয়া হলো।

এছাড়া ২৩ জানুয়ারি দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই শরীফ ইমরানের সঙ্গে বিয়ে হয় এরিকো নাকানোর। জাপানি আইনানুসারে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা টোকিওতে শুরু করেন বসবাস। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।

তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সাত বছরের সানিয়া হেনা। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের সঙ্গে এরিকোর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে একই বছরের ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।

কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

এরপর একই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাংলাদেশেই | মায়ের | কাছে | থাকবে | জাপানি | দুই | শিশু