আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

৭ মিনিটে পদ্মা সেতু পার, ২ ঘণ্টায় ভাঙ্গা পৌঁছাল প্রথম ট্রেন

৭ মিনিটে পদ্মা সেতু পার, ২ ঘণ্টায় ভাঙ্গা পৌঁছাল প্রথম ট্রেন
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছেছে প্রথম ট্রেন। প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ পাড়ি দিতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে পরীক্ষামূলক ট্রেনটির। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। ট্রেনটি কেরানীগঞ্জ এলিভেটেড রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে, নিমতলা স্টেশনে বেলা ১১টা ১ মিনিটে, শ্রীনগর স্টেশনে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে, মাওয়া স্টেশনে বেলা ১১টা ২৪ মিনিটে পৌঁছায়। সেখান থেকে বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে পদ্মা সেতুতে উঠে, ৭ মিনিট পর বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে ট্রেনটি সেতু থেকে নামে। এরপর ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায় দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে। পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি চালিয়েছেন লোকোমাস্টার হিসেবে এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে এম এ হোসেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করেছেন আনোয়ার হোসেন। পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ট্রেনের ঝকঝকাঝক শব্দ আর হুইসেলে সেতুর ৪২টি পিলার যেন প্রতিধ্বনি তৈরি করেছে। আর ৪১টি স্প্যান সেতুর ভার বহন করে নিয়ে একের পর এক স্প্যান স্বাগত জানিয়েছে। মাত্র সাত মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়া ট্রেনটিকে স্বাগত জানায় দুই প্রান্তের মানুষ। চোখে-মুখে উৎসুক জনতার আনন্দের উচ্ছ্বাস। এই যেন উত্তাল পদ্মায় উৎকণ্ঠার যাত্রার অবসান। সড়কপথে যারা যাতায়াত করতে পারেন না এবার রেলপথে যাতায়াত যেন তাদের মনেও স্বস্তি নিয়ে এসেছে। জানা গেছে, পদ্মা সেতু হয়ে আগামী অক্টোবরেই ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্পের ট্রেন চলাচল। উদ্বোধনের দিন সুধীসমাবেশও হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো সেটি চূড়ান্ত হয়নি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৪ মে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এছাড়া ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণসহ নতুন ট্রেন চালুর জন্য ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী বগি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই পথে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কোনো রেলক্রসিং রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত আগের ৬টিসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে বেড়ে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায়। চীনের অর্থায়নে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুন মাসে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে ৭ জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে ৫ জোড়া ট্রেন চলবে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলে ধরা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সড়ক পথ সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দেয়ার পর থেকে রেলওয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেয় মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজে। এরপরও ঢাকা থেকে যশোর অংশের কাজ শেষ করতে না পারায় পুরো পথের পরিবর্তে প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘স্টেশনগুলোর কাজ চলছে। উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যে প্রধান প্রধান স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে। তখন ট্রেনের সংখ্যাও বাড়বে। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ৭ | মিনিটে | পদ্মা | সেতু | পার | ২ | ঘণ্টায় | ভাঙ্গা | পৌঁছাল | প্রথম | ট্রেন