আগামী রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ । এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও সুসংহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক টুইট বার্তায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রকাশ করেছে। টুইট বার্তায় লেখা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ সফর ছিল ১৯৯০ সালে।
বন্যাদুর্গত বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অঙ্গীকার ছিল সেই সফরে। ফ্রান্স দূতাবাস টুইট বার্তায় লিখেছে, ৩৩ বছরে আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। বিগত বছরগুলোয় আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তিশালী হয়েছে।
ফ্রান্স দূতাবাস টুইট বার্তায় আরও লিখেছে, আগামী বছরগুলো আমাদের অংশীদারী আরও সুসংহত করবে, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
বাংলাদেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ উল্লেখ করে ফ্রান্স দূতাবাস বলেছে, দ্রুত অগ্রগতির পথে থাকা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে ফ্রান্স অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ব্যবসা-বাণিজ্যে দৃষ্টি ফ্রান্সের
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফর ছিল দুই দেশের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক। ওই সফরের সময় যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব খাতে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এ ছাড়া দুই দেশই আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় পরিমণ্ডলে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স—দুই দেশই ২০২১ সালে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ার অভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলেছে। বাংলাদেশ গত এপ্রিলে ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে। ফ্রান্স আরও আগেই তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি ঘোষণা করেছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ফ্রান্স ও বাংলাদেশ—দুই দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ভাবনায় ‘অন্তর্ভুক্তির’ বিষয়টি আছে। তাই এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে আলোচনা করবেন।
২০২১ সালের যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ তাদের অংশীদারির মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে সম্পর্ক আরো জোরদারের কথা বলেছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আগ্রহের বিষয়ে দুই দেশ একটি পত্র স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছে।
স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপন, উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাবে অগ্রগতির ইঙ্গিত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্স ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। বাংলাদেশ এবার ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারে। এ ছাড়া ফ্রান্স কিছু উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশ দুটি কার্গো উড়োজাহাজসহ ১০টি এয়ারবাস কিনতে রাজি হয়েছে।
সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠবে আশা ঢাকার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে তিনি ঢাকায় আসছেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি/সমঝোতা হতে পারে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোজসভার আয়োজন করবেন। সফর শেষে ঢাকা ছাড়ার সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।