আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

রুশ সেনারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের

রুশ সেনারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের

ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার সপ্তম দিন আজ। গেলো ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। এরপর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ধ্বংস করে বিভিন্ন বিমানঘাঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। হামলা থেকে বাঁচতে ইউক্রেন থেকে পালাচ্ছে লাখো মানুষ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনারা। ইউক্রেনর পরিস্থিতি খারাপে দিকেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অভিযানের শুরু থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোই ছিল রুশ বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তু। নগরাঞ্চল, বেসামরিক ও আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা করা থেকে বিরত ছিল রুশ সেনারা। তবে মঙ্গলবার থেকে এ কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইউক্রেনের নগরাঞ্চল ও বেসামরিক এলাকাগুলোতেও হামলা হচ্ছে।

তবে কোনও বেসামরিক এলাকায় হামলার আগে সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে রুশ সেনারা মাইকিং করছে বলেও রয়টার্সকে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দমদমের বাসিন্দা দীপশিখা দাসরাও। তিনি আটকে আছেন ইউক্রেনে। তার ভাষ্য, বোমারু বিমান হানার আগাম সঙ্কেত দিত যে সাইরেনটা, সেটার আওয়াজ গত দু’দিন ধরে বন্ধ খারকিভে। শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের গেরিলা বাহিনীর অতর্কিত হানার সঙ্গে পাল্লা দিতে রুশ বাহিনীও সামরিক পোশাক ছেড়ে দিয়েছে। কে শত্রু, কে মিত্র বোঝার উপায় নেই। মঙ্গলবার সকালে তারাও বুঝতে পারেননি।

দিনভর কার্ফুর মধ্যে দোকান- বাজার করার জন্য একটু ছাড় মিলেছিল। বেকেটোভার যে শেল্টারে দীপশিখারা আছেন, সেখান থেকে দেখা যায় খারকিভ সিটি কাউন্সিল ভবন। এ দিন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত এসেছে সেখানেও। খারকিভের একদল ডাক্তারি শিক্ষার্থীরা তখন কার্ফু উঠেছে বলে তড়িঘড়ি বেরিয়েছিলেন রসদ মজুত করার জন্য। তাদের মধ্যেই ছিলেন দীপশিখার বন্ধু ভারতের কর্ণাটকের শেখরাপ্পা জ্ঞানগউধর নবীন। স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার দেহ। আর খাবার কেনা হয়নি দীপশিখাদের।

বাড়ি (ভারত) ফেরানোর আশ্বাস শুধু সংবাদমাধ্যমেই জানছেন তারা। খারকিভের অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী এখনও আতঙ্কে। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম শুধু স্বজন-বন্ধুরা। দূতাবাস বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউই এখনও যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন হালিশহরের চয়ন কুমার, নির্মল কুমারেরা।

খারকিভে ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয় এবং ইউক্রেনে আটকে থাকা সব ভারতীয়কে অবিলম্বে ফেরানোর আশ্বাস দেয়া হয়।

গণমাধ্যমকে দীপশিখা বলেন, আশ্বস্ত হওয়ার মানসিক অবস্থাতেই নেই তারা, সেটা কি দেশের নেতা, কূটনীতিকেরা বুঝতে পারছেন না? চোখের সামনে বন্ধুকে হারিয়েছেন। খাওয়ার জল নেই, শৌচাগারের জল যেটুকু আছে সেটাই খাচ্ছেন তারা। রুশ সৈন্য ভারতীয়-অভারতীয় মানছে না। দীপশিখাদের একাধিক বন্ধুকে রুশ সেনারা মেরেছে, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের দেশ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে এর পরেও!

খারকিভে আটকে থাকা শিক্ষার্থীরা অনেকেই বুধবার মরিয়া হয়ে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানাচ্ছেন। রুশ সেনারা যেন তাদের প্রাণভিক্ষা দেন, সেই ভেবে নিজেদের পোশাকে ভারতের জাতীয় পতাকা এঁকেছেন তারা। কেউ ট্রেন, কেউ আবার ক্যাব ভাড়া করেছেন।

গেলো মঙ্গলবার (১ মার্চ) হালিশহরের গোয়ালাপাড়ার পূজা ঘোষ-সহ জেপোরিঝিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ১ হাজার ৪৯৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে জ়েপোরিঝিয়া স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে রওনা হয়েছে।

অন্য এক শিক্ষার্থী পূজা বলেন, হাঙ্গেরিতে ঢুকে তারা বুদাপেস্টে যাবেন। সেখান থেকে দেশে ফেরা যাবে।

সীমান্তে অবশ্য প্রথমে ইউক্রেনের মহিলা ও শিশু, তার পরে বিদেশিদের মধ্যে থেকে গর্ভবতী, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, সব শেষে পুরুষদের পার করানো হচ্ছে। ফলে অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় অসুস্থ হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দীপশিখা আরও বলেন, তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে তিন ঘণ্টার পথ মস্কো। রাশিয়া যদি ভারতীয়দের প্রতি উদারই হবে, তবে তো মস্কো হয়েও ফিরতে পারতেন তারা। তাদের যে বন্ধুরা চেষ্টা করেছিলেন, তাদের কোনও হদিস নেই। এখান থেকে হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ড ২২ ঘণ্টার পথ। এই পরিস্থিতিতে অসম্ভব সেই যাত্রা। আর এ দেশের বাসিন্দা তাদের অনেক সহপাঠী, যাদের সঙ্গে এই ক’দিন ছিলেন তারা, তারাও দেশের স্বার্থে বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এ মুহূর্তে তাদের করণীয় কি সেটা নিয়ে দ্ধিধান্বিত দীপশিখারা।

সূত্র: আনন্দবাজার।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রুশ | সেনারা | তুলে | নিয়ে | যাচ্ছে | মেয়েদের