আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) থেকে ভারতে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১৩তম আসর। উপমহাদেশে এ নিয়ে চতুর্থবারের মত ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। তবে এবারই প্রথম ভারত এককভাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বত্ব লাভ করেছে।
১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তান, ১৯৯৬ সালে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ও ২০১১ সালে সর্বশেষ ভারত-শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ যৌথভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করে বেশ সফল হয়েছিল। উপমহাদেশে ক্রিকেট উন্মাদনা সম্পর্কে পুরো বিশ্বই অবগত। তার উপর টুর্নামেন্টটি যদি বিশ্বকাপ হয় তাহলে এর রেশ যে কতদুর যেতে পারে তা আগের তিন আসরেই প্রমাণিত হয়েছে।
এবারের বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্ট আয়োজনে ভারত পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে তিনবার সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ভারত নিজেদের প্রমাণ করেছে।
এবারের আসরে ৪৬ দিনে ১০টি ভিন্ন ভেন্যুতে ৪৮টি ম্যাচে ১০টি দেশ অংশ নেবে।
এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ভারত। যে কারণে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বয়কটের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। যার ফলে বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণায় বেশ বিলম্ব হয়। মাত্র তিন মাস আগে আইসিসি টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত সূচি ঘোষণা করেছে। প্রথম ঘোষিত সূচি অনুযায়ী আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তানের ব্লকবাস্টার ম্যাচটির নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি দেখা গেলে ম্যাচটি একদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। যে কারণে নির্ধারিত সূচিতে নয়টি ম্যাচের উপর প্রভাব পড়ে।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মত ভারত সফরে আসা পাকিস্তান দলকে গত সপ্তাহে হায়দারাবাদে উষ্ণ অর্ভথ্যনা জানানো হয়। অথচ এর মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে পাকিস্তান দলকে ভিসা দিয়েছিল ভারতীয় দূতাবাস।
পাকিস্তানী লেগ স্পিনার শাদাব খান স্বীকার করেছেন ভারতে আসার পর থেকে হোটেলে যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে দারুনভাবে বরণ করে নেয়া হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। নিরাপত্তার কারণে শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম ওয়ার্ম আপ ম্যাচটি ৫৫ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে কোন দর্শক প্রবেশের অনুমতি ছিলনা।
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্ব বৃহৎ ভেন্যু নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আগামীকাল ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে এবারের বিশ্বকাপের। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে প্রতিষ্ঠিত ১ লাখ ৩০ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এ স্টেডিয়ামেই ১৯ নভেম্বর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
এই স্টেডিয়ামেই আগামী ১৪ অক্টোবর টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হবে।
১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছিল ভারত। এরপর ২০১১ সালে ঘরের মাঠে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া। ওয়নাডে ফর্মেটে ১৩ হাজার রানের মালিক বিরাট কোহলিকে নিয়ে ভারত এবারও নিজেদের মাটিতে শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে।
১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান আগের বিশ্বকাপগুলোতে সাতবার ভারতের কাছে পরাজিত হয়েছে। যদিও ওয়ানডে ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা অধিনায়ক বাবর আজমের নেতৃত্বে বদলে যাওয়া পাকিস্তান তাদের আক্রমনাত্মক বোলিং বিভাগ নিয়েও এবার বেশ আশাবাদী। ৫৮’রও বেশি ব্যাটিং গড় নিয়ে কোহলির থেকেও এগিয়ে আছেন বাবর। প্রস্তুতি ম্যাচে অবশ্য দুটিতেই পরাজিত হয়ে বাবর আজমের দল। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটে পরাজয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে ১৪ রানে।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড চার বছর আগে লর্ডসে দারুন উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে পরাজিত করে শিরোপা জয় করেছিল। বিশ্বকাপের এমন একটি ফাইনালের কথা অনেকদিন সবাই মনে রাখবে। ফাইনালে বেন স্টোটকসের ৮৪ রানের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। জশ বাটলারের নেতৃত্বে বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের পঞ্চম স্থানে ইংল্যান্ড এবারও শিরোপা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। নিজেদের পরখ করে নিতে ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচের সুযোগ পেলেও তা বৃষ্টিতে ভেসে যায়। পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ৪ উইকেটে পরাজিত করেছে ইংলিশরা। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান পারদর্শীতা দেখিয়ে ইংল্যান্ড প্রস্তুতিটা ভালই সেড়ে নিয়েছে।
এবারের আসরই ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের জন্য। ওয়ানডে অল রাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে থাকা সাকিবের উপর ভর করেই বাংলাদেশ গত কয়েক বছর নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে।বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার ৩৬ বছর বয়সী সাকিব ওয়ানডেতে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৫৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭ হাজারেরও উপর রান করেছেন, উইকেট দখল করেছেন ৩০৮টি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শনিবার নিজেদের প্রথম ম্যাচেই উজ্জীবিত বাংলাদেশ নিজেদের প্রমান করতে মুখিয়ে আছে।
বিশ্বকাপে সর্বাধিক পাঁচবরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া অভিজ্ঞ ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে দারুন আত্মবিশ্বাসী। ওয়ানডেতে ৬৩০০ রানের বেশি সংগ্রহ করা ওয়ার্নারের সাম্প্রতিক ফর্ম অসিদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তবে অল রাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ফর্মে রয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭১ বলে ৭৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে চোকার্স হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকা এবার সেই তকমা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ফেভারিটের তকমা নিয়ে প্রতিটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পুরো আসরে ভালো খেলেও, তীরে এসে তরি ডুবে প্রোটিয়াদের। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালের বিশ^কাপের সেমিফাইনালে উঠেও ফাইনালের টিকিট পায়নি তারা। বৃষ্টি আইনের অঙ্ক মেলাতে ভুল করা, ল্যান্স ক্লুজনারের ভুল সিদ্ধান্তে অ্যালান ডোনাল্ডের রান আউট হওয়া বা হার্শেল গিবসের সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়া- এসব ঘটনায় চোকার্স খ্যাতি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনজুরির কারনে দলের মূল দুই পেসার এনরিচ নর্টি ও সিসান্ডা মাগালাকে পাচ্ছে না প্রোটিয়ারা, যা দলের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
স্পিন নির্ভর আফগানিস্তান ভারতীয় উইকেটের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান ও নুর আহমেদ আফগানদের আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। আইপিএল’র খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই স্পিনাররাই আফগানিস্তানকে নতুন ভাবে বিশ্বকাপে মর্যাদা দিতে চায়। আগের আসরগুলোতে নিজেদের মোটেই প্রমান করতে পারেনি আফগানিস্তান। শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রস্তুতিটাও দারুনভাবে সেড়ে নিয়েছে।
১৯৯৬ সালে ফেবারিটদের পিছনে ফেলে শিরোপা জয় করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শ্রীলংকা। কিন্তু পরিবর্তিত সময় পার করে আবারো বিশ^কাপে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দাসুন সানাকার দল। অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে গড়া লংকান দলটি বেশ কিছুদিন ধরেই নিজেদের পনুর্গঠনের চেস্টা করছে। এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ৫০ রানে অল আউট হবার পর ভারতের কাছে ১০ উইকেটের পরাজয়ের লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসাই এখন শ্রীলংকার সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।
শীর্ষ সারির দলগুলোর বাইরে বাছাই পর্ব থেকে উঠে একমাত্র দল হিসেবে এবার বিশ্বকাপে মাঠে নামবে নেদারল্যান্ড। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাছাইপর্বে বিদায় করে দিয়ে ভারতের টিকিট নিশ্চিত করা নেদারল্যান্ডকে কিছুটা হলেও সমীহ করতে হবে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে।