আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বিনিয়োগে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতা শাহ আলমসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, শাহ আলম ২০১০ সালে নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে এ প্রতারণা শুরু করে। তিনি প্রতিষ্ঠাটির চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক ব্যবসায় খুব সহজেই উদ্বুদ্ধ হয়। এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (১২ মার্চ) রাতে অভিযান চালিয়ে নরসিংদী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), মো. সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আ. হান্নান মোল্লাহ (৩০)।

রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 খন্দকার আল মঈন বলেন, নরসিংদী জেলার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার সাধারণ মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন। তারা ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভের আশায় শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।


‘ধর্মের দোহাই দিয়ে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা’

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে নরসিংদী জেলার পলাশ থানায় একটি মামলা করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরেও অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার প্রত্যাশায় নরসিংদীতে অবস্থিত র‍্যাব-১১ এর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর র‍্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

‘গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়- ২০১০ সালে নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারক চক্রটি। অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতো তারা।’

তিনি আরও বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে চারটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠান ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এছাড়া অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেন। তারা আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তিদের পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিতেন। পরে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, স্বদেশ টেক্সটাইল লিমিটেড, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিমিটেড ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিমিটেড।

 র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা উত্তোলনের আবেদন করে। তখনই তারা বিভিন্ন অযুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুঁলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

 

এসআই/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ধর্মীয় | অনুভূতির | দোহাই | দিয়ে | ২০০ | কোটি | টাকা | আত্মসাৎ