পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবার সুফল পাবে পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। এতে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যাবে। আপাতত দুইটি ট্রেন চলাচল করবে। তবে গোটা জেলায় স্টপেজ দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি স্টেশনে। সময়সূচি নিয়েও কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। রাজবাড়ীর পাশাপাশি কালুখালী জংশনেও একটি স্টপেজ দেওয়ার দাবি জেলাবাসীর।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাজবাড়ী হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাবে দুটি ট্রেন।
স্থানীয়রা বলছে, রেলের শহর হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী। রাজবাড়ী থেকে খুলনা, রাজশাহী, ভাঙ্গা, ভাটিয়াপাড়া ট্রেনে যাতায়াত করা যায়। সরাসরি ঢাকার সঙ্গে রেল লাইন না থাকলেও রাজবাড়ীবাসী স্বপ্ন দেখতো একদিন ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়ার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সে স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে। আর এখন তো স্বপ্নের খুব কাছে রাজবাড়ীবাসী।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচলকারী ৭২৫/৭২৬ নং সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করে ১ নভেম্বর থেকে এবং
বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী ৭৯৫/৭৯৬ নং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন ২ নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে রাজবাড়ী আসবে রাত ২টা ২০ মিনিটে। ৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে ২টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৫টায়। এই ট্রেনটি সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে রাজবাড়ী আসবে ১০টা ৪০ মিনিটে। ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে খুলনা পৌঁছাবে দুপুর ৩টা ৫০ মিনিটে।
অন্যদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে রাজবাড়ী এসে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। ৬টা ১০ মিনিটে রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে।আবার ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে রাজবাড়ী পৌঁছাবে রাত ২টা ২০ মিনিটে। ট্রেনটি বেনাপোলে ফিরে যাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।
এই ট্রেন দুটি আপাতত পোড়াদহ জংশন স্টেশনের পর কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে থামবে। পোড়াদহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত মোট স্টেশনের সংখ্যা ৩২টি। আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। ধাপে ধাপে ট্রেন সংখ্যা বাড়বে।
রাজবাড়ীর গণমাধ্যমকর্মী দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ট্রেনে যাওয়া যাবে। এটা রাজবাড়ী জেলাবাসীর জন্য খুবই খুশির খবর। কিন্তু যেই টাইম শিডিউল দেওয়া হয়েছে এতে রাজবাড়ী বাসীর তেমন কোনো উপকার হবে না। এছাড়া জেলায় মাত্র একটি স্টপেজ রাজবাড়ী স্টেশনে দেয়া হয়েছে। জেলার মধ্যে কালুখালী অথবা পাংশা স্টেশনে স্টপেজ দিলে জেলাবাসীর জন্য ভালো হতো।
রাজবাড়ী শহরের স্থানীয় বাসিন্দা শামিম, সবুজ, হেলাল, মিরাজসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ১ নভেম্বর রাজবাড়ী জেলাবাসীর একটি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তবে ট্রেনের টাইম শিডিউল নিয়ে আমরা আশাহত। আমাদের সুবিধার্থে রাজবাড়ী-ঢাকা-রাজবাড়ী একটি আন্তঃনগর ট্রেন দেওয়া হোক।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত জানান, আপাতত খুলনা-ঢাকা চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল-ঢাকা চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে চলাচল করবে- এ চিঠি তারা পেয়েছেন। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য রেল জনপ্রিয়। মানুষ যাতে সাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারে সেজন্য তারা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। ইতোমধ্যে সুন্দরবর এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজশাহী-ভাঙ্গা চলাচলকারী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত নেয়া হতে পারে এমন কথাও শুনেছি।
এ ব্যপারে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (পাকশী) নুর মোহাম্মদ বলেন, ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী জংশন দিয়ে খুলনা ও বেনাপোল নিয়মিতভাবে যাতায়াত করবে। কাশিয়ানী-খুলনা রুটের রেলপথ নির্মাণকাজ চলমান থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে এই ট্রেন দুটি চলাচল করবে। মূলত এই কারণে আমরা খুব বেশি স্টপেজ দিতে চাচ্ছি না। তবে এই সেকশনে রাজশাহী-পদ্মা সেতু-ঢাকা রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিয়মিত চলাচল করবে এবং খুলনা গোয়ালন্দ ঘাট চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
