সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষক নিজাম উদ্দিন একজন অনুপ্রেরণার নাম। লাউ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আনসার মিয়া ছেলে নিজাম। তিনি এর আগে প্রবাসে গিয়ে প্রায় সাত লাখ টাকা নষ্ট করে আসছেন। বাড়িতে এসে ধান চাষ করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হত, এখন লাউ চাষ করে সংসার চালিয়ে অনেক সঞ্চয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নিজামের বয়স এখন প্রায় ৩৫ বছর। পরিবারে রয়েছেন বাবা, মা, ছেলে-মেয়েসহ ৫ জন সদস্য। তিনিই সংসারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। একসময় একা কাজ করে সংসার চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠছিল। অনেক ধার-দেনাও হতে হয়েছিল তার। এক পর্যায়ে তিনি নিজের উদ্যোম ও পরিশ্রমের ফলে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে নেমে পড়েন শাক-সবজি চাষাবাদে। এখন তিনি সফল একজন চাষি।
জানা যায়, নিজাম উদ্দিন বছরের ১২ মাসেই কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকেন এখন। তবে সবজির মধ্যে তিনি লাউ উৎপাদন করেন বছরের ৭ মাস। এসময়ে তিনি প্রায় ২ লাখেরও বেশি টাকা আয় করে থাকেন। লালশাক, আলু, বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া,লাউ প্রভৃতি সবজিও উৎপাদন করেন। তবে অধিক গুরুত্ব দেন লাউ চাষের ওপর। কারণ, এ সবজি প্রায় সারাবছরই উৎপাদন করা যায়। এতে লাভও হয় অনেক বেশি।
তিনি বলেন, মানুষ পরিশ্রম করে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আমি প্রথমে টমেটো ও লাউ চাষ করে করে লোকসানে পড়েছি। তখন আমি বুঝিনি, কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। মনোবল ধরে রেখে পরিশ্রম করে গেছি। প্রবাসে না গিয়েও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, সেটা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। দুই একর জমিতে লাউ আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৪০হাজার টাকা। এখান থেকে খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
এদিকে নিজাম উদ্দিনের সফলতায় এ অঞ্চলের অনেকেই এখন সবজি চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন বলে জানান ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা জানান, তারাও কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজাম উদ্দিন তাদের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ। এক সময় তিনি অভাবে দিন পার করতেন। এখন তার জমিতেই পরিচর্যার কাজ করেন অনেক শ্রমিক। কৃষি কাজে কোনো লজ্জা নেই। পরিশ্রম করে যদি সফলতা পাওয়া যায় তাতেই আনন্দ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, নিজাম উদ্দিন একজন প্রগতিশীল কৃষক। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সবজি আবাদ করছেন। কৃষি বিভাগ তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। নিজাম উদ্দিনের মতো আরও উদ্যোমী কৃষক সবজি চাষে আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা করতে সবসময়ই প্রস্তুত। আমাদের এই উপজেলা ৪৫৮ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ আরো বাড়াতে চাচ্ছি। আমাদের অনেক জায়গা পতিত থাকে। এই জমি গুলো সবজির আবাদ করা হবে।
এএম/