প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের তফসিল নাটক স্রেফ ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনকে বৈধতার সীল মোহর দেয়ারই কারসাজি মাত্র। কাজী রকিব আর নুরুল হুদার দেখানো ভাঁওতাবাজির নির্বাচনের পথেই হাঁটছেন কাজী আউয়াল। বললেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার (২২ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, তথাকথিত কিংস পার্টি, ভূইঁফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরী করে তাদেরকে দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না গিয়ে হালুয়া-রুটির ভাগ প্রাপ্তির লালসায় গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন।
তিনি বলেন, কিছু লোক সামান্য খুদ-কুড়োর লোভে তারা বিবেক বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই সব রদ্দি মার্কা বেইমান দলছুটরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। কিন্তু এই সমস্ত রং বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংকেতবার্তা টের পাচ্ছেন না, জনগণ খুব দ্রুতগতিতে ধেয়ে যাচ্ছে সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দিতে, জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এই নব্য রাজাকারেরা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে গেষ্টাপো বাহিনীর কায়দায় গড়ে তোলা গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ীঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার করে তুমুল ভাংচুর করা হচ্ছে বাড়িঘরে। বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা। দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রিজভী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারাদেশে বিএনপির প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকিয়ে রেখে কক্ষে কক্ষে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিতো আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেয়া হচ্ছে। বিরোধীদল করলে মরেও শান্তি নাই। প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে জনগনের আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এখন। সরকার এই শান্তিপুর্ন আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য নিজেরা আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াওয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনারা দেখেছেন যারা ধরা পড়ছে তারা ক্ষমতাসীনদের লোক।