চলতি বছর এক বিস্ময়কর আলোচনায় ছিলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটজিপিটি। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্ব আরও একধাপ এগিয়েছে। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলধারার কথোপকথনের একটি অংশ হয়ে উঠছে, যার কৃতিত্ব মূলত ওপেন এআইয়ের। ওপেনএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটজিপিটি নিয়ে এসে কর্মক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। নতুন এ প্রযুক্তির একটি অংশ ইতিমধ্যে বাজারে আসছে। চলতি মাসের শুরুর দিকেই সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক স্টার্টআপ আর্টিসান এআই চালু হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ২২ বছর বয়সী জাসপার কারমাইকেল-জ্যাক এটি তৈরি করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে এআই-চালিত ডিজিটাল কর্মী থাকবে। এটি মানুষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
আর্টিসান এআই আগামী বছর বেশ কয়েকটি এআই আর্টিসান বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে। প্রথমেই ‘আভা’ নামের একটি এআই বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ স্বয়ংক্রিয় করবে। এই এআই বাজারে ইতিমধ্যে থাকা চ্যাটবট ও একই ধরনের এআইয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি চিহ্নিত করবে।
কারমাইকেল-জ্যাক বলেছেন, আভার সঙ্গে ১৫ মিনিটের কথোপকথনের পরেই এটি জ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করার ক্ষমতা পাবে। সেই তথ্য দিয়েই সে সম্ভাবনা তৈরি করবে। এটি পরামর্শ দিতে, প্রচারণা সম্পাদনা করতে, মিটিংয়ে যোগ দিতে ও নোট নিতেও পারবে।
কারমাইকেল-জ্যাক বলেন, আর্টিসান সামান্য বা কোনো ইনপুট ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। এটি প্রতিষ্ঠানের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উৎপাদনশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। প্রযুক্তি ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আর্টিসান এআই দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে।
কারমাইকেল-জ্যাক আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ডিজিটাল কর্মী। একজন মানুষ যা কিছু করতে পারেন, ডিজিটাল কর্মীও যেন সেসব করতে পারে। আর্টিসান সরাসরি মানুষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। আমরা চাই, বিরক্তিকর কাজগুলো আর্টিসান করুক। যেন কাজটি বিরক্তিকর বা কঠিন কি না, সে সম্পর্কে তাদের কোনো অনুভূতি থাকে না। ’
কর্মীদের কাছে এআইয়ের ক্রমবর্ধমান হুমকি নতুন মনে হতে পারে। তবে হুমকি বাড়ছে। গত অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যাতে এআইয়ের অব্যাহত ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও স্ট্যানফোর্ড ডিজিটাল ইকোনমি ল্যাবের পরিচালক এরিক ব্রাইনজল্ফসন বলেছেন, ‘যদিও অনেক এআই প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই কর্মশক্তিকে নাড়া দিচ্ছে। তবুও আমরা এখনো শুরুতেই আছি। আমার ধারণা, আমরা এখনো কিছুই দেখিনি, এটা কেবল অর্থনীতিতে এআই একীকরণের প্রথম ধাপ। এআই অর্থনীতিতে আরও অনেক প্রভাব ফেলবে। এটি ব্যবসার জন্য আউটপুট, উত্পাদনশীলতা ও রাজস্ব বৃদ্ধি করবে। ’
এআইয়ের কারণে চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রাইনজল্ফসন বলেন, সাধারণ একটি কোম্পানির ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার স্বতন্ত্র কাজ কর্মীদের দ্বারা সম্পাদিত হয়। যদি এই কাজগুলোর মধ্যে কিছু কাজ এআই বা স্বয়ংক্রিয় করা যায়, তাহলে ভালো। এসব প্রযুক্তির ওপর ঝোঁক না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে যদি এতে খরচ কমানোর সম্ভাবনা থাকে। এদিক থেকে কর্মীদের কিছুটা উদ্বেগ আছে।
মার্ক মুরো বলেছেন, এ কারণে আর্টিসান এআই আগামী মাসগুলোতে বাজারে কী নিয়ে আসছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া কর্মীদের, বিশেষ করে যাঁরা সৃজনশীল কাজ করেন, তাঁদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারমাইকেল-জ্যাকও সম্মত হয়েছেন যে কীভাবে এআইকে নতুন শিল্পে চালু করা যায়, তার জন্য কিছু পরিকল্পনা বা তদারকির প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রয়োজন হবে। ’